• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৩ দফায় মেডিকেল বোর্ডের প্রস্তাব নাকচ খালেদা জিয়ার


আদালত প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৮, ০৬:৪৩ পিএম
৩ দফায় মেডিকেল বোর্ডের প্রস্তাব নাকচ খালেদা জিয়ার

ঢাকা : কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও চিকিৎসা নিতে আবারও অনীহা প্রকাশ করায় মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ বাস্তবায়নে দেরি হচ্ছে। তবে সুপারিশ অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালেই (বিএসএমএমইউ) যেন তিনি চিকিৎসা সেবা নেন, সেজন্য কারা কর্তৃপক্ষ সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানান।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ওই কর্মকর্তা বলেন, নাজিম উদ্দিন রোডের পুরানো কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য যে সুপারিশ করেছেন, তা বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সুপারিশের ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) ভর্তির কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি আগের মতো এবারও নেতিবাচক আচরণ করেছেন।

তিনি বলেন, এ পর্যন্ত মোট তিন দফায় খালেদা জিয়াকে সরকার কর্তৃক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার দেওয়ার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। এরপরও তিনি রাজি হননি। এমনকি তার শরীরে নানারকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নতুন করে হৃদযন্ত্রে সমস্যা হয়েছে জানানোর পরও তিনি প্রস্তাব নাকচ করেছেন।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, খালেদা জিয়াকে কারাগারের একজন চিকিৎসক বুঝিয়ে বলেছেন যে বিএসএমএমইউয়ের চিকিৎসা আন্তর্জাতিক মানের। সেখানে ওনার কোনো সমস্যা হবে না। ওখানে চিকিৎসা করানো হলে উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন, ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারবেন। কিন্তু ওই কর্মকর্তার সঙ্গে খালেদা জিয়া কোনোরকম কথাই বলেননি। তাই মেডিকেল বোর্ডের করা সুপারিশ বাস্তবায়ন হতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানান কারাগারের এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার এলাকায় দায়িত্ব পালন করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা বলেন, মেডিকেল বোর্ডের যে সুপারিশ করা হয়েছে, সেই অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এমনকি ভর্তির জন্য একটি প্রক্রিয়া রয়েছে সেটাও শুরু করেনি কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্তৃপক্ষ কয়েক দফায় খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য ভর্তি হতে বলেছেন। কিন্তু এতে তিনি সায় দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের চিঠি হাতে পেয়েছি। সেটি দেখছি। হাসপাতালে ভর্তির জন্য একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সেটি আমরা করছি। যেকোনো সময় হাসপাতালে ভর্তি করানো যেতে পারে।

এর আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আসেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর সেখান থেকে বেরিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যরা ওনার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।

পরদিন (১৬ সেপ্টেম্বর) মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সেবার বিষয়ে প্রতিবেদন কারা কর্তৃপক্ষ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে। ওই প্রতিবেদনে খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করে চিকিৎসার সুপারিশ করেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে পাঁচ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ওই দিনই তাকে আদালত থেকে নেওয়া হয় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত সাত মাসের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে সাজা ভোগ করছেন।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই বিএনপি দাবি করে আসছে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং তার সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবি করা হয়।

এদিকে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার একাধিক শুনানির তারিখ পড়লেও সেসব শুনানিতে শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে হাজির হননি খালেদা জিয়া। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ওই আদালত স্থানান্তর করা হয় কারাগারে। ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারেই বসে আদালত। সেদিন আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া বলেন, শারীরিক অবস্থার কারণে তার পক্ষে আর আদালতে হাজির হওয়া সম্ভব না। আদালত যা খুশি সাজা দিতে পারেন। পরে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর কারাগারে আদালত বসলেও হাজির হননি খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড কিংবা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই অনুযায়ীই বিএসএমএমইউয়ের পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে গঠিত হয় মেডিকেল বোর্ড। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে রাখার দাবি করা হলেও সেই দাবি মানা হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!