• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করার নির্দেশ

৩০ ডিসেম্বর সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ২৯, ২০১৯, ০৪:৪০ পিএম
৩০ ডিসেম্বর সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ

ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন সামনে রেখে বিএনপির ‘সম্ভাব্য আন্দোলন কর্মসূচির’ দিকে বিশেষ নজর রাখছে আওয়ামী লীগ।

দেশ ও বিদেশে সরকারের জন্য বিদ্যমান স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের ‘আন্দোলন কর্মসূচির’ বিষয়ে আওয়ামী লীগ উদ্বিগ্ন না হলেও দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় এ নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণও চলছে।

কোনো ধরনের কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতির মাঠে সরকারবিরোধী প্রধান প্রতিপক্ষ ঐক্যফ্রন্ট সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ও কোনো ধরনের দাবি আদায় করতে পারবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

তবু একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রথম বছর পূর্তিতে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিবির আসলে কী পরিকল্পনা করছে, সেসব বিষয়ে তীক্ষ নজর রাখার পাশাপাশি বিষয়গুলো জনগণের কাছে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা।

আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের একবছর পূর্তি। দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাপক শোডাউন করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলটির জোটের শরিক ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।

দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা কয়েকটি বামদলও।

সরকারের বর্ষপূর্তির এক সপ্তাহ আগে ৩০ ডিসেম্বর বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশ ও কালো ব্যাজ ধারণের কর্মসূচিকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। বাম গণতান্ত্রিক জোটের ‘কালো পতাকা মিছিল’ ও সমাবেশকেও তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা।

ওইদিন যে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ। কোনোরকম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা দেখা গেলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সরকারের নির্দেশে সক্রিয় রাখা হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি শোডাউনের অনুমতি পাবে কি পাবে না- সেটা পুলিশ প্রশাসনের বিষয়। বিএনপি অনুমতি পেলেও ওই দিন আওয়ামী লীগের পক্ষে মাঠে পাল্টা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না।

বিএনপি ও দলটির মিত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করুক, তা চায় আওয়ামী লীগ। তাই এখন পর্যন্ত ৩০ ডিসেম্বরকে ঘিরে আওয়ামী লীগ কোনো কর্মসূচি দেয়নি।

আগামী ৭ জানুয়ারি সরকারের বর্ষপূর্তি জাঁকজমকভাবে পালনের প্রস্তুতি রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। গত বছরের এই দিনে টানা তৃতীয় মেয়াদে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার শপথ নেয়।

৭ জানুয়ারি বড় ধরনের সমাবেশের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে শোডাউনের পরিকল্পনাও আছে দলের। একই দিন সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও শোভাযাত্রা ও সমাবেশের মতো কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।

সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকারের যাত্রা থেকে দেশ ও বিদেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় স্বস্তিতে আছে দলটি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন অনেকটাই নির্ভার।
কয়েকটি দেশ একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরপর ‘অনিয়ম’ নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর যে চাপ তৈরি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তা কেটে যায় নতুন সরকারের শুরুতেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসার পাশাপাশি সেসব দেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতিও দেয়। নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগ বিদেশিদের কাছে তেমন জোরালো হয়নি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এ প্রসঙ্গে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বলেন, বিএনপির খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা আসলে খালি কলসি বাজে বেশির মতো। দলটির তথাকথিত তুমুল আন্দোলন আমরা দেখেছি।

তাদের যত সমাবেশ, নিজেদের মধ্যে মারামারিও তত। নেতাদের ওপর কর্মীদের আস্থা নেই। যে নেতারা বোরকা পরে আদালতে জামিন নিতে যান, তাদের ওপর কর্মীদের আস্থা না থাকাই স্বাভাবিক। তাদের আন্দোলনের ডাক শুনে মনে হয় এর জন্যই বলে খালি কলসি বাজে বেশি।

তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। নির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন, এমনকি সংসদে সংরক্ষিত নারী সদস্যের কোটাও তারা পূর্ণ করেছেন। সদস্য হিসেবে সংসদ থেকে সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আবার সেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। আন্দোলন-সমাবেশের আগে তাদের পদত্যাগ করা উচিত ছিল।

আওয়ামী লীগের সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ও বামজোটের কর্মসূচিকে ঘিরে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কাও একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সরকারি দলের নীতিনির্ধারক নেতারা। সেজন্য দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

বিশেষ করে ঢাকা মহানগরসহ সব থানা-ওয়ার্ড নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। যে কোনো ধরনের সহিংসতার আভাস পাওয়া মাত্র নেতাকর্মীরা তা প্রতিরোধের চেষ্টা করবেন। তবে বিএনপি বা তার মিত্রদের কোনো রকম উসকানির ‘ফাঁদে’ পা না দেওয়ার জন্যও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বের জোট কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না।

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সরকারবিরোধী শক্ত কোনো আন্দোলন কর্মসূচি পালনের দিকেও আপাতত যেতে পারছে না।

দলটির চেয়ারপারসন কারাবন্দি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে থাকা ও শীর্ষ নেতৃত্বে কোন্দলের কারণে জোরালো কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বলে মনে করেন তারা।

সরকারের একবছর পূর্ণ হতে চললেও শক্ত কোনো কর্মসূচি দলটি ঘোষণা করতে পারেনি সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বে সমস্যার কারণে।

অন্যদিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘ভোট ডাকাতি ও কারচুপির নির্বাচন’ আখ্যায়িত করে আসছে বিএনপিসহ বিরোধী জোট।

অবশ্য তাদের মতে, কৌশলগত কারণেই দল ও জোটের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলমান রয়েছে। ‘দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য’ নির্বাচনের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!