• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৩ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯, ১১:২৩ পিএম
৪৩ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর

ঢাকা: চকবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় প্রথমে ৭০টি বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ৬৭টি মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উদ্ধার করা মরদেহগুলোর মধ্যে ৪৬টি মরদেহ শনাক্ত করেছে স্বজনরা। এগুলোর মধ্যে ৪৩টি মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা জেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, এখানে (ঢামেক) মোট ৬৭টি লাশ এসেছে।  সর্বশেষ ৪০টা লাশ শনাক্ত হয়েছে। বাকি ২৭ জনের মরদেহ ভয়াবহভাবে আগুনে পুড়ে গেছে। এগুলো যদি শনাক্ত করা না যায় তাহলে আমরা বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেবো। সেখানে গিয়ে স্বজনরা শনাক্ত করতে পারবেন।  মরদেহগুলোর স্যাম্পল মালিবাগ সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে রক্ত, দাঁত এবং হাড় পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আজকে (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতের মধ্যে যে কেউ এসে দেখে লাশগুলো দেখে শনাক্ত করার সুযোগ পাবেন। এরপরও যদি কারও লাশ শনাক্ত করা না যায় তাহলে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এগুলো শনাক্ত করা হবে। আমরা প্রত্যেকটি মরদেহের ডিএনএ স্যম্পল সংগ্রহ করেছি। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে মালিবাগে সিআইডি পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে স্বজনদের সেম্পল জমা দেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। নিখোঁজের বাবা-মা, সন্তান ও ভাইবোনদের মধ্যে যে কেউ স্যাম্পল জমা দিতে পারবেন।

মরদেহগুলো কীভাবে সংরক্ষণ করা হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, আমাদের হাসপাতালে এত মরদেহ রাখার ব্যবস্থা নেই। তাই আজকে শনাক্ত করা শেষ হলে রাজধানীর অন্য হাসপাতালগুলোতে মরদেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

এরপর ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এম ইদ্রিস সিদ্দিকী জানান, শনাক্ত না হওয়া লাশগুলো কুর্মিটোলা, হৃদরোগ ও সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে সংরক্ষণ করা হবে।

ঢাকা জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, এ পর্যন্ত লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে ৩৭ জনের। চকবাজারে নিহতদের মরদেহ আনা হয় ঢামেকে। পরে এগুলো হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে।

এর আগে  বিকাল তিনটার দিকে ঢামেক মর্গ থেকে মরদেহ হস্তান্তর কাজ শুরু হয়। বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ৩২টি মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়ার সময় ঢাকা বিভাগের অ্যাডিশনাল ডিভিশনাল কমিশনার সেলিম রেজা জানান, শনাক্ত হওয়া ৩৭ জনের মধ্যে ১৫ জনই নোয়াখালীর। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি লাশের সঙ্গে স্বজনদের ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে

হস্তান্তর করা মরদেহগুলো হচ্ছে ১৫ নম্বর ব্যাগে রাখা অছি উদ্দিন (২৩), পিতা-নাসির উদ্দিন, ধানমণ্ডি, ঢাকা; ৩৬ নম্বর ব্যাগে রাখা কামাল হোসেন (৪৫), পিতা নূর মোহাম্মদ, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী;  ১৪ নম্বর ব্যাগে রাখা মাহফুজুর রহমান বাবু (৪০), পিতা- মাহফুজুর রহমান, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী; ৪৭ নম্বর ব্যাগে রাখা হাফেজ মো. কাউসার (২৬), পিতা-মো. খলিলুর রহমান শ্রীপুর, হোমনা, কুমিল্লা, ৪২ নম্বর ব্যাগে রাখা আলী হোসেন (৬৫) পিতা মৃত বুলু মিয়া, সোনাইমুড়ি, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী; ইয়াছিন (৩৩), পিতা-আ. আজিজ, শাহাদত হোসেন, পিতা মোসলেম উদ্দিন, ১৭, কেবি রোড, চকবাজার, ঢাকা ও ৩৪ নম্বর ব্যাগে রাখা আবু বকর সিদ্দিক (২৭), তার পিতার নাম পাওয়া যায়নি। তবে মরদেহটি গ্রহণ করেছেন ওসমান গনি গ্রাম: মোহাম্মদপুর, থানা: হাজীগঞ্জ, জেলা: চাঁদপুর।

লাশ হস্তান্তরের সময় ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে প্রত্যেককে সরকারিভাবে নগদ ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে সৎকারের জন্য।  সৎকারের অর্থ দেয়া হচ্ছে লাশ হস্তান্তরের সময়।

এদিকে, যে ৩৭টি মরদেহ শনাক্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন: নোয়াখালীর নাটেশ্বর ইউনিয়নের ঘোষকামতা গ্রামের খাসের বাড়ির মো. সাহেব আলীর দুই ছেলে মাসুদ রানা (৩০) ও রাজু (২৮), একই ইউনিয়নের নাটেশ্বর গ্রামের মিয়ন হাজি বাড়ির ভুলু মিয়ার ছেলে মো. আলী হোসেন (৫৫), বটতল গ্রামের শাহাদাত হোসেন হিরা (২৭), মির্জা নগরের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (২৮), নাছির উদ্দিন (২৯), মো. বাবু ও কামাল হোসেন; চক বাজারের মোহাম্মদ আলী, অপু রায়হান, মো. মাসুদ রানা ও তার ভাই শাহাবুবুর রহমান, নোয়াখালীর সিদ্দিকুল্লাহ, কুমিল্লার মো. খবির উদ্দিন নাইম, মো. ইলিয়াস আলী মিয়া, চকবাজারের মো. ইয়াসিন খান রনি, চকবাজারের সুমি আখতার, স্বামী মিটু, তাদের তিন বছরের শিশুপুত্র সাহির, সোনাইমুড়ির আয়েশা খাতুন ও হেলাল উদ্দিন, চকবাজারের মো. জুম্মন (৩২), পটুয়াখালীর এনামুল হক, কুমিল্লার হাফেজ মো. কাউসার ও শাহাদত, কুড়িগ্রামের মোরশেদ আলম, পটুয়াখালীর মো. এনামুল হক।

উল্লেখ্য, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মসজিদের সামনের সড়কে একটি পিক-আপ ট্রাকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই সেই ট্রাকের আগুন পাশের কেমিক্যাল গুদামে লেগে গেলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর এ আগুন আশেপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এ আগুনে পুড়ে নারী-শিশুসহ কমপক্ষে ৭০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!