• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ লাখ মানসিক রোগীর জন্য ১টি হাসপাতাল


নিউজ ডেস্ক অক্টোবর ১০, ২০১৭, ০৪:২০ পিএম
৫ লাখ মানসিক রোগীর জন্য ১টি হাসপাতাল

ঢাকা: মানসিক রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দেশে আড়াই কোটির ওপর। বিশাল এ জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য সারাদেশে মাত্র ৩০০ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। সে হিসাবে ৫ লাখ ২০ হাজার রোগীর জন্য মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা দিয়ে আসছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট প্রকাশিত তথ্য- ২০১৭ থেকে এসব বিষয় জানা যায়। 

এদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে এ সংক্রান্ত দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। জনবল সংকট, তদারকির অভাবে প্রতিষ্ঠানটি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য।’ দিনটি পালন করতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা।

এদিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা যায়, দেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে মানসিক রোগীর হার ১৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর কমিউনিটি জরিপ অনুসারে এ হার ৩২ শতাংশ। ১৮ বছরের নিচে অর্থাৎ শিশু-কিশোরদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ। মোট আক্রান্তের শতকরা ১৯ ভাগ নারী। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে দেশে মোট ২৫০ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও ৫৭ জন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট আছেন। দেশে ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী নারী পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে শতকরা ৪৩ ভাগ নারী মানসিক চাপে ভুগছেন।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জন মানসিক রোগে ভুগছেন। এদের মধ্যে ৮ দশমিক ৪ জনের অবস্থা উদ্বেগজনক, ৪ দশমিক ৬ জন বিষণœতায় এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ গুরুতর মানসিক রোগে ভুগছেন। ৩১টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে ১৪টিতে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। অনেক জেলা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ মানসিক চিকিৎসক নেই। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় মানসিক স্বাস্থ্য-২০১৪ নামে একটি খসড়া আইন করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

অন্যদিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান, অবকাঠামো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়েও রোগী ও স্বজনদের নানা অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে হাসপাতালটির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের প্রতিটি কক্ষ ঘুরে তাদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। হাসপাতালটিতে ২০০ শয্যা থাকলেও কোনো বেডেই ম্যাট্রেস দেখা যায়নি। শুধু চাদর বিছানো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে টয়লেটগুলো ব্যবহারের অযোগ্য।

এ সময় কথা হয় মহিলা ওয়ার্ডের শিশু বিভাগে ৩০৫ নম্বর কক্ষে নোয়াখালী থেকে আসা শিমু ও তার বড় বোন সুমির সঙ্গে। তারা জানান, ছারপোকার যন্ত্রণায় বিছানায় থাকা যায় না। ডাক্তারও আসেন কম। মহিলা ওয়ার্ডের কেবিনে ৩১১ নম্বর কক্ষে ভর্তি আছেন খিলক্ষেতের জাবানা (১৮)। জাবানার মা বলেন, ১০ দিনের জন্য ৪৫০০ টাকা দিতে হয়। সেবার মান ভালো নয়। চতুর্থ তলায় পুরুষ ওয়ার্ডে ৪১৩ নম্বর কক্ষে ভর্তি আছেন বাসাবোর হুমায়ন কবির। তিনি জানান, নার্সরা দিনে একবার মাত্র আসেন।

হাসপাতালের একাধিক সিনিয়র নার্স-স্টাফ জানান, পুরুষ ওয়ার্ডে ৯৮টি শয্যা আছে। প্রতিদিন গড়ে ৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। সবাই মানসিক রোগী। এদের সামাল দিতে অনেক বেগ পেতে হয়। সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে হয়। দিনের বেলায় দুই-তিনজন কাজ করলেও রাতে একজন করে ডিউটিতে থাকেন।

আরেক সিনিয়র নার্স-স্টাফ জানান, ‘এখানে কাজ করা আর বাঘের খাঁচায় থাকা একই কথা। গেটে দারোয়ান সংখ্যা খুবই কম।’ হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাস্টার জয়নাল আবেদিন বলেন, ওয়ার্ড বয় ১১ জন, অফিস সহায়ক ১১ জন, দরোয়ান ৭ জন, সুইপার ১৪ জন ও কুকার ৩ জন-যা অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় খুবই কম।

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক আলম বলেন, হাসপাতালটিতে জনবল সংকট আছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন চিকিৎসা নেন। নতুন-পুরোনো মিলে হাসপাতালে গড়ে ১৪০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক আছেন ৫ জন, সহযোগী অধ্যাপক আছেন ৫ জন, সহকারী অধ্যাপক আছেন ১৩ জন, মেডিক্যাল অফিসার ও এমডি কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকসহ ৫০ জন চিকিৎসক আছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংখ্যায় কম। তাই রোগীদের সেবা দিতে একটু সমস্যা হয়।

অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম আরো বলেন, সাধারণত নারীরা বিষণ্নতা, অতি উদ্বিগ্নতা, স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন। ছেলেদের মধ্যে মাদকাসক্ত ছাড়া অন্য রোগের মাত্রা কম। দেশে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সাইক্রিয়াটিক, ওকুপেশনাল থেরাপিস্ট, কাউন্সিলর ও সোশ্যাল ওয়ার্কার সংখ্যাও হাতেগোনা। তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালের দেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা ছিল ১৬ শতাংশ। গত বছর এটা এসে দাঁড়িয়েছে ৩২ শতাংশে। ১২ বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়েছে। এর কারণ হতে পারে সামাজিক চাপ, অস্থিরতা, প্রতিযোগিতা, বাচ্চাদের খেলাধুলা-বেড়ানোর সুযোগ কমে যাওয়া, বই কোচিং-মোবাইল ফোনে সীমাবদ্ধ থাকা ইত্যাদি।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎকরা জানান, সরকারিভাবে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, মানসিক হাসপাতাল পাবনা, মনোরোগ বিভাগ বিএসএমএমইউ, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ থাকা মেডিক্যাল কলেজসমূহ ও সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালে খুব সীমিত পরিসরে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়। মানসিক রোগ ও মাদকাসক্তি নিরাময় বিশেষজ্ঞ ও ডেল্টা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হারুনুর রশিদ বলেন, মনোরোগে আক্রান্ত রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা পেলে ৯৯ শতাংশ সুস্থ হওয়া সম্ভব। অনেকেই স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, যা চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. ফারুক আলম আরো জানান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে এফসিপিএস, এমসিপিএস এবং এমডি সাইক্রিয়াটিক কোর্স চালু আছে। এমবিবিএস শেষ করে দুই বছর গ্রামে কাজ করার পর এ কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। এতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। এ কোর্সটি দেশের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালু রয়েছে।

আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মেন্টাল হেলথ ইন দ্য ওয়ার্কপ্লেস’ বা ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য’। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব মেন্টাল হেলথ’-এর উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে ডব্লিউএইচওর সহায়তায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এ রোগের ব্যাপারে জনসচেতনতা বাড়াতে আলোচনা সভা, র‌্যালি, ক্রোড়পত্র প্রকাশের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!