• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হচ্ছে!


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৮:৪৭ এএম
৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল হচ্ছে!

ঢাকা: অবৈধভাবে অনেকেই বাসাবাড়ি, অফিসে কোটি কোটি নগদ টাকা জমা রাখছে। এসব অর্থের বেশির ভাগ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট করে রাখা হয়েছে। 

ভারতে বিপুল পরিমাণ অর্থ এভাবে ঘরে রাখায় ২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে। 

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে এভাবে বাতিল করলে অনেকে বিপাকে পড়বে। তাই কোনো কোনো মহল থেকে প্রস্তাব উঠেছে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে নতুন টাকা ছাপানো উচিত। কারো কাছে এমন টাকা থাকলে সরকারি আইন ও নিয়মনীতি মেনে তা ব্যাংকে জমা দিয়ে নতুন টাকা নেবে। এতে সরকারের আয় যেমন বাড়বে তেমনি দেশে বিনিয়োগও বাড়বে। 

সম্প্রতি দেশে ক্যাসিনো, জুয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের বাসা, অফিসে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার করেছে। এতে আটক করা হয়েছে একাধিক ব্যক্তিকে। উদ্ধার হওয়া কোটি কোটি টাকা আয়ের কোনো উৎস বলতে পারছে না আটককৃত ব্যক্তিরা। কালোবাজারি, মাদক, জুয়া, ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে এসব জমানো অর্থ। 

অবৈধভাবে আয়ের সব টাকাই বাড়িতে জমিয়ে রাখছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। অভিযানে দেখা গেছে, উদ্ধার হওয়া অর্থের মধ্যে বেশির ভাগ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট।

দেশের সবচেয়ে বড় মানের টাকা হলো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। জমাতে সুবিধা হওয়ায় তারা এই দুটি নোট পছন্দ করছে। ফলে ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর বাড়ির সিন্দুকে আটকে যাচ্ছে সব টাকা।

ভারত সরকার দেশের এই অবৈধ জমানো টাকা মূল স্রোতে বা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে ২০১৬ সালের নভেম্বরে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে। নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বিশাল সফলতা পায় সব অবৈধ আয় করা নগদ অর্থ বিনিয়োগে নিয়ে আসাতে।বেআইনিভাবে প্রাপ্ত বা আয়কর ফাঁকি দিয়ে ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে গৃহে রক্ষিত সম্পদ দুর্নীতি, ঘুষের অর্থ সাধারণত বড় নোট যথা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট করে রাখা হয়ে থাকে। ভারত সরকার বড় অঙ্কের টাকার নোট বাতিল করার পর এসব দুর্নীতিবাজের অবৈধ সঞ্চয় আহরণ ও রক্ষাকরণের সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে এসব নোট বাতিল করা হলে একই সুবিধা পাবে সরকার। অবশ্য এর আগে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে স্বাধীন বাংলাদেশ পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রচলিত ৫০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করে। এই নোট সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বা নিকটস্থ ডাকঘরে জমা দিয়ে নতুনভাবে মুদ্রিত নোট নেওয়ার জন্য তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তন আমলে প্রচলিত ১০০ টাকার নোট বাতিল করে। ১০০ টাকার নোট যাতে দেশের অর্থব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে এবং পাকিস্তান প্রত্যাগতরা বা পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশের সম্পদ পাকিস্তানে পাচার না করতে পারে সে জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। এতে বাংলাদেশ সরকার সফলতা পেয়েছিল।

অন্যদিকে চলতি বছরে বাজেট ঘোষণায় বলা হয়, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শিল্প স্থাপনে অপ্রদর্শিত আয় থেকে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগ থেকে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা হবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে আবাসিক প্রয়োজনে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ সহজতর করা হয়েছে। নির্ধারিত হারে ট্যাক্স পরিশোধ করলে বিনিয়োগ করা টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে না সরকার। বর্তমানে প্রচলিত বাসাবাড়ি, অফিসে জমানো অর্থ বাতিল করা হলে সব টাকা বিনিয়োগে চলে আসবে। একই সঙ্গে বিপুল পরিমাণ টাকার কর আদায় করা যাবে। যারা নিজের বাড়ির সিন্দুকে টাকা রাখছে সেগুলো নির্দিষ্ট সময় দিয়ে সরকারি নিয়মনীতি মেনে ব্যাংকে জমা করার সুযোগ দিলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

জানতে চাইলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানে ড. আব্দুল মজিদ বলেন, ‘অবৈধভাবে উপার্জন করেছে যারা, তাদের সব টাকা ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট হয়ে বাসাবাড়িতে স্তূপ হয়েছে, সিন্দুকে রেখেছে। এসব অর্থ বিনিয়োগে আনতে বড় নোট বাতিল করা হবে দেশের অর্থনীতির একটি বড় অর্জন। নির্দিষ্ট সময় দিয়ে ঝটিকা ঘোষণার মাধ্যমে এসব নোট বাতিল করার সময় এসেছে। শুধু বাতিল অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা উচিত। ওই সময়ের মধ্যে জরিমানা-কর দিয়ে অর্থ ব্যাংক ব্যবস্থায় জমা করা না হলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এমন ঘোষণা দিলে যারা বাসাবাড়িতে টাকা জমিয়েছে সব বের হয়ে যাবে। ২০০৮ সালে এমন একটি ঘোষণা দিয়ে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা বাড়তি কর আদায় করা হয়েছিল। ১০ শতাংশ বাড়তি কর হিসেবে এই টাকা আয় করা হয়েছিল। মূল অর্থ ছিল অনেক বেশি। আমাদের অর্থনীতি আরো বেশি গতিশীল হবে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলে।’

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!