• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫৩ লাখ টাকায় সড়ক সংস্কার হাত দিতেই উঠে গেল রাস্তার কার্পেটিং!


লালমনিরহাট প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০, ০৯:১২ পিএম
৫৩ লাখ টাকায় সড়ক সংস্কার হাত দিতেই উঠে গেল রাস্তার কার্পেটিং!

লালমনিরহাট : লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫৩ লাখ টাকায় নির্মিত আড়াই কিলোমিটারের সড়কের একাংশ কার্পেটিং হাত দিলেই উঠে যাচ্ছে। এ কারণে গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, লালমনিরহাট-বড়িমারী মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের তুষভান্ডার (রাজবাড়ি রোড) থেকে দলগ্রাম (খোকা চেয়ারম্যানের বাড়ি) পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ ফুট প্রস্থের সড়কটি সংস্কারের কাজ পায় ‘বিনিময় টেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে কাজটি যৌথভাবে ‘কিনে’ নেয় জেলার দুজন ঠিকাদার। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের আওতায় তুষভান্ডার-দলগ্রাম রাস্তা সংস্কারের কাজটি দেখভাল করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংস্কার কাজ শুরুর পর থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন একাধিকার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজামানকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি।

সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে আসেন কালীগঞ্জের ইউএনও রবিউল হাসান। তিনি রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়ার ‘ফিটনেস’ কমসহ নানা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশসহ উপজেলা প্রকৌশলীকে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

কিন্তু এক সাপ্তাহে না যেতেই আবারো নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার অভিযোগ উঠে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। তাদের পাশাপাশি এলজিইডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওঠে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ।

এদিকে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরোজমিনে সেখানে গেলে দেখা যায়, হাত দিয়ে টানতেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ ঘটনায় সেখানে উপস্থিত লোকজন নানা ধরণের ক্ষোভ জানাচ্ছেন।

স্থানীয়রা বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত রাস্তার কাজের এই মান নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। এ কারণে ভয়ে কাজ রেখে পালিয়েছেন ঠিকাদারসহ প্রকৌশলীর লোকজন। এছাড়া সপ্তাহখানেক আগেও ওই সড়কে নিম্মমানের ও নিয়ম বহির্ভূত খোয়া ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী বলেন, ‘রাস্তার কাজ সঠিকভাবে করা হচ্ছে না। যেভাবে কাজ করেছে সেটাকে কাজ বলা যায় না। নিম্মমানের পিচ (বিটুমিন) ব্যবহার করায় সেগুলো এখন উঠে আসছে’।
এলাকার মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার কাজের ব্যাপারে আমরা কিছু বললেই ঠিকাদারের লোকজন আমাদের উপর উল্টো রাগ দেখায়। আর এভাবেই সরকারের টাকা নষ্ট হচ্ছে’। ‘যেনতেন ভাবে নিম্মমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদার। সেকারণে কার্পেটিং করতে না করতেই তা উঠে যাচ্ছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঠিকাদারের প্রতিনিধি মাসুদ রানা জানান, সড়ক সংস্কারের কাজটি পেয়েছে বিনিময় টেডার্স নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনে দুজন ঠিকাদার যৌথভাবে কাজটি করছেন। নিম্মমানের বিটুমিন দিয়ে কাজ করার কারণে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বৃষ্টির সময় কাজটি করায় কিছু অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। আমরা এগুলো আবার ঠিক করে দিব’।

কাজটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান গতকাল শুক্রবার বিকেলে নিম্মমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি দাবি করে বলেন, ‘নতুন কার্পেটিং হাত দিয়ে টানলে উঠে আসবেই। দুই থেকে তিনদিন পর তা আর উঠে আসবে না’

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নিম্মমানের কাজ প্রমাণিত হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!