• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৬৮ বছরে রাবি: পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই


আবু সাঈদ সজল জুলাই ৫, ২০২০, ০৬:৫৪ পিএম
৬৮ বছরে রাবি: পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই

ছবি: প্রতিনিধি

রাবি : বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চশিক্ষা দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজকর্ম করা হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশে পৃথিবীর নানা দেশে নানা সভ্যতায় গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়।

মরক্কোর ফেস নামক স্থানে ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু পৃথিবীর প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?

আবাসিক বিশ্ববিদ্যায় মানে হলো যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়াসহ সেখানেই অবস্থান করে জ্ঞান অর্জন করা যায়। ঐতিহাসিকরা জানান, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় হলো পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা প্রথম আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। পঞ্চম শতাব্দীতে ভারতের বিহারে গড়ে ওঠা এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পাটনা থেকে ৮৮ কিমি দক্ষিণ পূর্ব দিকে অবস্থিত।

আর বাংলাদেশের প্রক্ষাপটে সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরে কিংবা তারপরে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৬৭ বছরেও পূর্নাঙ্গ আবাসিক সুবিধার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।

১৯৫৩ সালের ০৬ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ৬৭ বছর পেরিয়ে আজ ৬৮ তে পা রেখেছে বিদ্যাপীঠটি। দীর্ঘ চড়াই-উৎরাই পার হয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। স্কোপাসের জরিপে গবেষণায় শীর্ষে থাকা  প্রতিষ্ঠানটি ৬৭ বছরেও পূর্নাঙ্গ  আবাসিক সুবিধা দিতে পারেনি শিক্ষার্থীদের। 

প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিভিন্ন মেসে অবস্থান করে। আর আবাসিক ১৭ টি হলে ৩য় বর্ষ ছাড়া আবাসিক সুবিধা প্রায় অসম্ভব। যদি কেউ এর আগে হলে উঠতে পারে সেতো সৌভাগ্যবান। আবার অনেকে শেষ পর্যন্ত নিরাশ হয়ে হলে উঠেই না। 

এবছর সারা বিশ্বে চলছে করোনা মহামারী। এই মহামারীতে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকায় সবাই নিজ নিজ বাসায় পাড়ি জমিয়েছেন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে মেস মালিকদের মাসিক ঘর ভাড়া চাপ। করোনার এই ক্রান্তিলগ্নে যেখানে অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী ঠিকমতো অন্ন যোগাতেই বেগ পোহাচ্ছে তার মধ্যে এ যেন খরার উপর মরার ঘা'র মতো অবস্থা। এনিয়ে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাড়া মওকুফের দাবি তোলে। এতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও মেয়র মহোদয়ের সুদৃষ্টিতে ৪০ শতাংশ মওকুফে সম্মত হয় মেস মালিক সমিতি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা নতুন সুর দেয় ভাড়া পুরোটাই গুনতে হবে মেস বর্ডার এসব শিক্ষার্থীদের। মনে রাখা দরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। অনেকের পরিবারও চলে এসব শিক্ষার্থীর টিউশনের টাকায়। কিন্তু মহামারীর ফলে আজ সবাই বিপাকে দিন পার করছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি কিংবা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা রাখতে এবং অনাবাসিকতার সুযোগ সৃষ্টিতে অতিদ্রুতই নতুন নতুন হল নির্মাণ আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আবাসিক সুবিধা না দিতে পারা সত্যিই দুঃখজনক। এর পিছনে কারন হিসেবে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সিট বানিজ্য, নতুন নতুন হল নির্মাণ না করা এবং অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করানো।

বিশ্ববিদ্যালয় ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যাণে ১০ তলা বিশিষ্ট দুটি হল নির্মাণের কথা থাকলেও এখনও কাজের কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়নি। তাছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বেশ কয়েকটি হল। এগুলোর পলেস্তারা ভেঙ্গে আহত হয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষাদান, বিদ্যাচর্চা, গবেষণা ও পাণ্ডিত্যের সুখ্যাতি দেশ পেরিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসিক সুবিধা দিতে না পারার ব্যর্থতা এসব গৌরবকে সহসাই ম্লাণ করে দেয়।

এছাড়াও গেস্টরুম কালচার ও সান্ধ্যকোর্স বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি ব্ন্ধ করা সময়ের দাবি। রাকসু নির্বাচন সচল, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাখাতে বরাদ্দ বহুগুণ বাড়ানো (নইলে স্কোপাসে শীর্ষ তালিকায় রাবির নাম নাও থাকতে পারে), একাডেমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সুশৃঙ্খল পরিবেশে দেখতে প্রয়োজনীয় অনুসারে ছাত্র ভর্তি করা, আবাসিক সুবিধা না দিয়ে গাদা গাদা শিক্ষার্থী ভর্তি না করানোই শ্রেয়। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে মেসে থাকা ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে নতুন নতুন আবাসিক হল নির্মান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শতভাগ আবাসিক সুবিধা দিবে এমনটাই প্রত্যাশা রইলো।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!