• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
কথা রাখেনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো

৮ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম
৮ টাকা বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম

ঢাকা : দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৮ টাকা পর্যন্ত। ফলে ভোক্তাদের এক লিটারের এক বোতল তেল কিনতে ব্যয় করতে হবে ১১০ টাকা। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৩ টাকা বাড়িয়েছিল কোম্পানিগুলো।

জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়ে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং  সেলকে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। তখন মনিটরিং সেল বিশ্ববাজারের দর যাচাই করে সয়াবিনের দাম বাড়ানোর অনুমতি দেয়নি। এরপরে দফায় মূল্য বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়। আর সেই আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পূর্বেই বাজারে নিয়মবহির্ভূতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। এখন ট্যারিফ কমিশন সেটা পর্যালোচনা করবে। এরপর অনুমতি সাপেক্ষে দাম বাড়ানো হবে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বাজারে নতুন দামের সয়াবিন তেল সরবরাহ শুরু করেছেন কোম্পানিগুলোর পরিবেশকরা। কিছু কিছু কোম্পানির নতুন দরের তেল না এলেও ‘দাম বাড়ছে’ বলে দোকানে ঘোষণা করেছে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধি। তবে অনেক দোকানে কিছু কিছু পুরনো দামের তেল রয়ে গেছে। সেগুলোও অনেক দোকানি বেশি দামে বিক্রি করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে ২ লাখ টন ভোজ্যতেল উৎপাদিত হয়। বাকিটা পাম ও সয়াবিন হিসেবে আমদানি হয়। পরিশোধনকারী  কোম্পানিগুলো সেসব আমদানি করে পরিশোধন করে খোলা ও বোতলজাত অবস্থায় বাজারজাত করে।

বাংলাদেশে এডিবল অয়েলের রূপচাঁদা, সিটির তীর ও মেঘনার ফ্রেশ বাজারের উল্লেখযোগ্য ভোজ্যতেলের ব্র্যান্ড।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বোতলজাত তেলের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৫-৮ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির পর ঢাকার বাজারে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৬-৮৮ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৭৮-৮০ টাকায়।

এদিকে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, বছর ব্যবধানে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনে ৪.৩২ শতাংশ দাম বেড়েছে। আর মাসের ব্যবধানে তা ২.৪২ শতাংশ।

এছাড়া পাম তেলের দাম এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১০.৪৫ শতাংশ।

কারওয়ানবাজার কিচেন মার্কেটের আল-আমিন ট্রেডার্সের বিক্রেতা কালাম বলেন, খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ৫-৮ টাকা বাড়তি। পাইকারি বাজার থেকে মণে ২০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। হঠাৎ এ দরবৃদ্ধিতে বাজার অস্থির হয়েছে। এর আগে প্রতিদিনই পাম তেলের দাম একটু-একটু করে বাড়ছিল। এরপর একলাফে সয়াবিনের দাম এত বাড়ল।

অন্যদিকে ঢাকায় ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মৌলভীবাজারে প্রতি মণ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৩০ টাকায়, যেখানে প্রতি লিটারের দাম পড়ছে ৮১ টাকা ২০ পয়সা। যা দাম বৃদ্ধির আগেও ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি মণে ২৩০ টাকা দাম বেড়েছে।

এ বিষয়ে লাকী ট্রেডিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী ভুট্টু বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ছে, যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়েছে। প্রতি টন সয়াবিন তেল কিনতে ৭৯০-৮০০ ডলার লাগছে, যা আগে ছিল ৭২০-৭৩০ ডলার।

এদিকে গত মাসের শেষে একদফা বাড়ে ভোজ্যতেলের দাম। তারপরেও বিশ্ববাজারে দরবৃদ্ধির আজুহতে আবারো আরেক দফা দাম বাড়াচ্ছে উৎপাদক কোম্পানিগুলো।

যদিও ট্যারিফ কমিশনে ভোজ্য তেল উৎপাদনকারী, পরিশোধনকারী শিল্পের বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় দাম না বাড়ার ঘোষণা এসেছিল।

তখন শীর্ষস্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েল, এস আলমসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান উপস্থিত ছিল।

এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিটিং শেষে কমিশনের চেয়ারম্যান  মো. নূর-উর-রহমান বলেছিলেন, আমরা উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা তেলের দাম বাড়াবে না বলে আমাদেরকে বলেছে। তাই আপাতত তেলের দাম বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!