• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৯০ খুনেও অনুতপ্ত নন এই খুনি!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক নভেম্বর ২৯, ২০১৮, ০৯:৩২ পিএম
৯০ খুনেও অনুতপ্ত নন এই খুনি!

ঢাকা : সারা জীবনে নব্বইটির বেশি খুন করেছে স্যামুয়েল লিটল। জেরায় তা স্বীকার করার পরেও বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নন আমেরিকার ৭৮ বছরের বৃদ্ধ এই কয়েদি। এক নাগাড়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে টেক্সাসের এক কারাগারের সেল থেকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ইন্টারভিউ রুমে নিয়ে আসা হচ্ছে মাথাভর্তি পাকা চুলওয়ালা এই বৃদ্ধ কয়েদিকে।

শোনা যাচ্ছে, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের আক্রমণে তার শারীরিক অবস্থা মোটেই ভাল নয়। কিন্তু কোন অভিযোগের ভিত্তিতে জেলে পচতে হচ্ছে বর্ষীয়ান মানুষটিকে?

ঘটনার বিবরনে বলছে, স্যামুয়েল লিটলের বিরুদ্ধে গত পঞ্চাশ বছরে ৯০টিরও বেশি হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে, আশির দশকে লস এঞ্জেলেসে তিন মহিলাকে খুন করার অপরাধে আপাতত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হচ্ছে।

আমেরিকার অপরাধ ইতিহাসে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংখ্যক খুনের রেকর্ড রয়েছে সিরিয়াল কিলার ‌'দ্য গ্রিন রিভার কিলার' গ্যারি রিজবির। ১৯৮০-৯০ এর দশকে ওয়াশিংটনে সে মোট ৪৯ জনের প্রাণ নিয়েছিল। কিন্তু সেই মারাত্মক নজিরকেও ম্লান করে দিয়েছেন লিটল। শুধু তাই নয়, গোয়েন্দাদের কাছে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের খুঁটিনাটি বিবরণ সে উৎসাহভরে দিয়েছেন। জেরার মুখে ভেঙে পড়া তো দূরে থাক, অপরাধ স্বীকার করার সময় মাঝে মধ্যে তাকে শব্দ করে হাসতেও দেখা গেছে।

খুন করার জন্য শিকারের মধ্যে কী কী বৈশিষ্ট্য নজর রাখতেন লিটল? গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পানশালা বা অন্যত্র নেশায় আসক্ত একা নারী দেখলে যেচে আলাপ জমাত সে। একত্রে নেশা করার টোপ দিয়ে বা যৌন মিলনের প্রস্তাব দিয়ে মেয়েটিকে নিজের গাড়ির পিছনের আসনে এনে বসাত। কথা বলতে বলতেই তার গলা টিপে দমবন্ধ করে খুন করত লিটল।

তবে সবার সঙ্গেই যে সে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হত, এমন নয়। তার দাবি, লিঙ্গ শিথিল হয়ে যাওয়ার কারণে এ ব্যাপারে সে অক্ষম ছিল। যদিও কিছু নারীর দেহ ও পোশাকে তার বীর্যের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। যৌন মিলন হোক বা না হোক, শেষ পর্যন্ত মেয়েদের গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করাই ছিল স্যামুয়েল লিটলের প্রধান উদ্দেশ্য। মনোবিদদের ব্যাখ্যা, সম্ভবত প্রাণহানির মাধ্যমেই যৌন সুখ উপভোগ করতো বিকৃত মস্তিষ্কের এই খুনি।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ করার আগে মহিলাদের প্রচণ্ড পেটাতো স্যামুয়েল। প্রাক্তন মুষ্টিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে তার কব্জি অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। একবার একটি মেয়েকে তলপেটে এত জোরে সে ঘুঁষি মেরেছিল যে তার শিরদাঁড়া টুকরো হয়ে যায়।

বছরের পর বছর একের পর এক মহিলাকে হত্যা করেও কীভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছিল স্যামুয়েল? জটিল এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছে অপরাধী নিজেই। লিটলের দাবি, 'আমি নিজের পৃথিবীতে যা খুশি করতে পারি। তোমাদের বিশ্বে আমি কখনো ঢুকতাম না।'

গত অক্টোবর মাসে লিটলকে জেরা করেন ফ্লোরিডার ম্যারিয়ন কাউন্টির গোয়েন্দা সার্জেন্ট মাইকেল মঞ্জেলুজো। ১৯৮২ সালে ওই রাজ্যে বছর কুড়ির রোজি হিলকে সে খুন করেছিল। ৩৬ বছরের পুরনো সেই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দিয়েছে লিটল। বিস্মিত মঞ্জেলুজো জানিয়েছেন, 'হত্যার এমন নিখুঁত বর্ণনা শুনলে আঁতকে উঠতে হয়। প্রত্যেক শিকারের নাম ও মুখচ্ছবি মনে রেখেছে এই দুর্ধর্ষ খুনি।'

মৃতদের শরীরে পাওয়া রক্ত ও বীর্যের নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করার পরে স্যামুয়েলকে নিশানা করতে সক্ষম হয় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গৃহহীনদের একটি আশ্রয়স্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গিয়েছে, অতীতে অপহরণ, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধের জেরে সে বেশ কয়েক বছর জেলে কাটিয়েছিল।

সিরিয়াল কিলারের মনে কিন্তু কৃতকর্মের জন্য বিন্দুমাত্র আফশোস নেই। ছিটেফোঁটা অনুতাপের অবকাশ নেই তার চেতনায়। কর্মফল সম্পর্কেও তার ধারণা অতি স্বচ্ছ। স্যামুয়েল লিটলের সাফ যুক্তি, 'ঈশ্বর আমাকে এভাবেই গড়েছেন। তাই তার করুণা ভিক্ষা করার প্রয়োজন নেই। তিনি আমার সব কাজ সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল।'

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!