• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‍‍`ওষুধের মেয়াদের ডেট কোথায় লেখা থাকে সেটাই জানি না‍‍`


সোনালীনিউজ ডেস্ক জুন ২০, ২০১৯, ০৯:৫৮ পিএম
‍‍`ওষুধের মেয়াদের ডেট কোথায় লেখা থাকে সেটাই জানি না‍‍`

ঢাকা: বাজারে থাকা সব মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আগামী এক মাসের মধ্যে ধ্বংস করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ব্যাপারে কতটা সচেতন?

দেশের ৯৩% ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে এমন খবর প্রকাশের পর গত ১৮ই জুন দেয়া হাইকোর্টের এই নির্দেশে ওষুধ বিক্রেতা, সরবরাহকারী ও সংরক্ষণকারীদের শনাক্ত করার জন্যেও কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

কিন্তু এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার সময় কি তারা মেয়াদ দেখে কিনেন - বিবিসি বাংলার পাঠকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নানা ধরনের মতামত ও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় তাদের কাছ থেকে।

অনেকে যেমন মেয়াদ দেখে ওষুধ কেনার কথা জানিয়েছেন আবার অনেকে অকপটে স্বীকার করেছেন মেয়াদ না দেখে কেনার কথা। আবার -ওষুধের মেয়াদ কোথায় থাকে, মেয়াদের লেখার টাইপ বা কিভাবে সেটা দেখা যায় সেই বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন।

শহিদুল ইসলাম যেমন লিখেছেন "ওষুধের মেয়াদের ডেট কোথায় লেখা থাকে সেটাই জানি না"।

"বাংলাদেশের অনেকেই জানে না ট্যাবলেটের পাতায় কোথায় মেয়াদ দেয়া থাকে" লিখেছেন রায়সুল ইসলাম রাজু।

বাজার থেকে ওষুধ তুলে নিতে হাইকোর্টে নির্দেশ প্রসঙ্গে জারিন তাসনিম নিশি মন্তব্য করেছেন, "কোর্ট কীভাবে বুঝলো ৯৩% দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করে???"

বাংলাদেশের ফার্মেসিগুলোতে পুরো পাতা ওষুধ বিক্রি না করে তিনটা বা চারটা করে ওষুধ বিক্রির প্রবণতাও রয়েছে। আর এই প্রবণতার কারণে যে অনেক সময় ওষুধের মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও অনেক সময় বুঝা সম্ভব হয় না বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেক ক্রেতা।

মো: সজিব হোসেন ওষুধের মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে লিখেছেন "লোকাল দোকানদাররা তো অল্প কিছু পাতা কিনে একই প্যাকেটে বারবার রেখে দেয়, ঔষধের পাতার সিলটা স্পষ্ট করে দেওয়া থাকলে সুবিধা হয়, এছারাও ২-৩ টা ঔষধ নিলে তো বুঝার উপায় নেই কি দিলো"।

সম্প্রতি ঢাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেশের অধিকাংশ দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির তথ্য প্রকাশ করেছিলেন।

অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ছ'মাস ধরে পরিচালিত এক অনুসন্ধানে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান মিলন।

আলাপকালে তিনি বলেছিলেন বাজারে যাতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি না হয় সেটা নিশ্চিত করা যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি ওষুধ যারা উৎপাদন করেন তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই সেসব ওষুধ বাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া।

একই ধরনের মতামত দিয়েছেন বিবিসি বাংলার পাঠকেরাও। এক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করার পাশাপাশি মানুষের সচেতনতাও জরুরি বলে মনে করছেন তারা। এমনকি ফার্মেসির বিক্রেতাদেরও জবাবদিহি বা নজরদারির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করছেন অনেকে।

আয়েশা সিদ্দিকা খান যেমন লিখেছেন "যারা পড়া - লেখা জানে না তারা কিভাবে বুজবে যে মেয়াদোত্তীর্ণ?"

গ্রামের ফার্মেসির চিত্র উল্লেখ করে সৌদ সরকার লিখেছেন -"...সমস্যাটা হচ্ছে গ্রামের ফার্মেসিগুলোতে। সেখানে ঔষধের দোকানদারের কাছে গ্রামের মানুষ জিম্মি। কারন বড় রোগ হলে হাসপাতালে নিয়ে আসা যাওয়ার জন্য গ্রামের লোকেরা তাদের সাহায্য নিয়ে থাকে । এজন্য কেউই তাদের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চায় না। তাই গ্রামের ফার্মেসী এক প্রকার জবাবদিহিতার বাইরে থাকে।"

ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পরীক্ষার থেকে ওষুধ তৈরিতে মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামাল ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, মনিটরিং আসলে কতটা হচ্ছে সেই প্রশ্নও রয়েছে ক্রেতাদের মনে। এছাড়া ওষুধ কেনার সময় প্রেসক্রিপশান দেখানোর বিষয়টিও জরুরী ও বাধ্যতামূলক বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রবাসী সামির খান যেমন লিখেছেন, "বাংলাদেশে আইন করা উচিত প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঔষুধ বিক্রি করা নিষেধ । প্যাকেট ভেঙ্গে বিক্রি করাও নিষেধ করা উচিত। আমি বাহিরে থাকি কিন্তু এই পর্যন্ত কোন ঔষুধের প্যাকেট ভেঙ্গে বিক্রি করতে দেখি নাই। ডাক্তার যে কয়দিন খেতে বলে ওই কয়দিনই খাওয়া উচিত"।

অনেকের মতে, জরিমানা বা ঘুষ দিয়ে মুক্তি পাবার ঘটনা যদি না কমে, দুর্নীতি যদি না কমে, আইনের সঠিক প্রয়োগ যদি না ঘটে তাহলে বাংলাদেশে ওষুধসহ বিভিন্ন খাবারে ভেজাল দিয়ে মানুষকে মৃত্যুপথে ঠেলে দেবার ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

আর সচেতন মানুষ হয়ে ওষুধের মেয়াদ দেখে কিনলেও তাদের মনে এই প্রশ্নই জাগবে "মেয়াদ দেখেতো কিনি, সে অনুযায়ী ৯৩% মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ হলে আমরা কী খাই??"

সোনালীনিউজ/এইচএন

Wordbridge School
Link copied!