একসঙ্গে তিন সন্তানের মৃত্যু চিরদিনের মতো দুঃখী বানিয়ে গেল তাদের

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২১, ০৮:১১ পিএম
একসঙ্গে তিন সন্তানের মৃত্যু চিরদিনের মতো দুঃখী বানিয়ে গেল তাদের

তিন সন্তানের মৃত্যুতে নির্বাক বাবা রেজওয়ান আলী।ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারী: রেললাইনের ধারে রেলের একখণ্ড জমিতে ছোট একটি ঘর বানিয়ে থাকেন রেজওয়ান–মজিদা দম্পতি। রেজওয়ান আলী (৩০) পেশায় একজন রিকশাচালক। স্ত্রী মজিদা বেগম (২২) স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক। দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলেন তারা। 

তবে বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে একসঙ্গে তিন সন্তানের মৃত্যু তাদের চিরদিনের মতো দুঃখী বানিয়ে গেল।

জানা গেছে, বাড়ির পাশের রেললাইনের ওপর খেলার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যায় তাদের দুই মেয়ে লিমা আক্তার (৭) ও সিমু আক্তার (৪) এবং ছেলে মো. মোমিনুর রহমান (২)। তাদের বাঁচাতে গিয়ে মনষাপাড়া গ্রামের সালমান ফারাজি ওরফে শামীম (৩০) ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান।

তিন শিশুর বাবা রেজওয়ান আলী বলেন, প্রতিদিন সকালে সন্তানদের সঙ্গে নাশতা করে কাজে চলে যান স্বামী–স্ত্রী। বাচ্চারা তাদের মতো রেললাইনের আশপাশে খেলাধুলা করে। সন্ধ্যায় তারা (স্বামী–স্ত্রী) ঘরে ফেরেন। বাকিটা সময় সন্তানদের সঙ্গে কাটান। আজ সকালেও বাচ্চাদের এভাবে রেখে কাজে যান স্বামী–স্ত্রী। কিছুক্ষণ পরই দুর্ঘটনার খবর পান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন, তিন সন্তানের কেউই আর বেঁচে নেই।

স্থানীয়রা জানান, রেজওয়ান আলীর বাড়ির পাশে দিনাজপুর খালের ওপর একটি রেলসেতুর সংস্কারকাজ চলছিল। ওই কাজের ইট নিয়ে সেখানে একটি ট্রলি আসে। ট্রলিটি সেখানে আটকা পড়লে শিশুরা তা দেখতে যায়। সেখানে তারা খেলছিল। এ সময় চিলাহাটি থেকে ছেড়ে আসা রকেট মেইল ট্রেনটি খুলনার দিকে যাচ্ছিল। সকালে ঘন কুয়াশার কারণে বেশি দূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। আর ট্রলির শব্দের কারণে ট্রেনের শব্দও বোঝা যায়নি। ট্রেন আসতে দেখে সেতু সংস্কারকাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাহারাদার সালমান ফারাজি বাচ্চাদের রক্ষা করতে যান। তিনি শিশু মোমিনুরকে কোলে নিয়ে রেললাইন থেকে লাফ দেওয়ার আগেই ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। লিমা ও সিমু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। স্থানীয় লোকজন সালমান ও মোমিনুরকে উদ্ধার করে নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়।

দুপুর ১২টার দিকে তিন শিশুর লাশ বাড়িতে নিয়ে এলে আশপাশের লোকজন সেখানে ভিড় জমান। মা মজিদা বেগম একসঙ্গে তিন সন্তানকে হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। 

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার (জিআরপি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান বলেন, লাশের সুরতহাল করে দাফনের জন্য অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Link copied!