সুবর্ণচরে সিঁধ কেটে ঘরে ডুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণ

  • নোয়াখালী (সুবর্ণচর) প্রতিনিধি  | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪, ০৪:১৪ পিএম
সুবর্ণচরে সিঁধ কেটে ঘরে ডুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণ

ফাইল ছবি

নোয়াখালী: নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নে ঘরের সিঁধ কেটে চুরি করতে ডুকে মা-মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতিসহ তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে । তিন জনের ওই চোর দলের দুইজন ওই গৃহবধূকে (২৯) গণধর্ষণ ও একজন তার মেয়েকে (১২) ধর্ষণ করে।

এসময় তাদের ঘর থেকে একজোড়া করে নাক-কানের দুল, নাক ফুল ও নগদ ১৭হাজার ২২৫টাকা লুট করে নিয়ে যায়। নির্যাতনের শিকার ওই নারী নিজে বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় একটি ধর্ষণ গণধর্ষণ সিঁধ কেটে চুরির অপরাধে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে নোয়াখালী সদরের মাইজদী থেকে মুল অভিযুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল খায়ের মুন্সী মেম্বারকে গ্রেপ্তার করেন।

সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি নতুন বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী নারী তিন সন্তানের জননী ও নির্যাতিত শিশু স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বার (৬৫) তিনি চরওয়াপদা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য এবং চর কাজী মোখলেছ গ্রামের মো হারুন (৩০)। 

পুলিশ ও স্থানীয় এবং নির্যাতনের শিকার ঐ নারীর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে হাতিয়া থেকে এসে চরকাজী মোখলেছ গ্রামে নতুন বাড়ি করে একজন দিনমজুর। একা ওই বাড়িতে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান’সহ বসবাস করতে তিনি। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গা কাজ করতে গেলে ২-৩দিন পর বাড়ি ফিরে আসতেন ওই দিনমজুর। গত দুই দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে যান। এসময় বাড়িতে তিন মেয়েকে নিয়ে ছিলেন ওই গৃহবধূ। রাত ২টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে ভিতরে প্রবেশ করে একজন। পরে সে ঘরের দরজা খুলে দিলে আরও দুইজন ভিতরে প্রবেশ করে। এদের মধ্যে দুই জন পালাক্রমে ওই গৃহবধূকে এবং একজন তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে ওই গৃহবধূর হাত-পা ও মুখ বেঁধে ঘরে থাকা স্বর্ণ ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। 

গভীর রাতে শিশুদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে গৃহবধূর বাঁধন খুলে দেয় এবং বিষয়টি চরজব্বার থানায় অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে। নির্যাতরে শিকার ঐ নারী বলেন, ঘরে হঠাৎ আলো জ্বলার সাথে ঘুম ভেঙে গেলে তিনি কে কে বলে চিৎকার করেন। এরপর তাঁর মুখ চেপে ধরে উড়না দিয়ে মুখ, হাত পা বেঁধে পেলে পালাক্রমে দুই জনে ধর্ষণ করে। পাশের রুমে মেয়েকে অন্যজন ধর্ষণ করে। ধর্ষকেরা বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাতের বাহুতে ঘুসি দিয়ে সাথে থাকা কানের দুল ও নগদ টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় বলে তোর মেয়ের বাঁধন খুলে দিছি। এরপর মেয়ের হাতখুলে দিয়ে যায়। পরে মেয়ে এসে তাঁর হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেন। 

নির্যাতিতার স্বামী মো. আক্তার হোসেন বলেন, গত দুই দিন আগে কাজের সন্ধানে তিনি বাড়ির বাইরে যান। পাশের গ্রামের মেহরাজ মেম্বারের একটি খামারে তিনি কাজ করছেন। সকালে উনার শ্বশুর ফোন করে বলেন তাঁর বাড়িতে চুরি হয়েছে এবং আরো কি যেন হয়েছে। ফোন পেয়ে খামার থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে বাড়িতে ফিরে এসে দেখেন তাঁর স্ত্রী ঘরের কোণে বসে কাঁদছে। তিনি স্ত্রীর কাছে কি হয়েছে বিষয়টি জানতে চায়। তখন নির্যাতিতা ঐ নারী তাকে (স্বামীকে) পুরো ঘটনা বলেন। কন্ঠশুনে তিনি মুন্সী মেম্বারকে চিনতে পারেন। পরে থানা পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। 

তিনি আরো বলেন, গত দুই-তিন বছর আগে মুঠোফোনে অভিযুক্ত মুন্সী মেম্বার তাঁর স্ত্রীকে বিপদে আপদে সহযোগিতা করার ও অনৈতিক কাজের (গ্রীল কাবাব) পোড়া মোরগ খাওয়ানো প্রস্তাব দেন। তিনি ঐ প্রস্তাব প্রত্যাখান করে মুঠোফোনে নাম্বার ব্লক করে ফেলেন। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হানিফ চৌধুরী বলেন, ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আবুল খায়ের মুন্সী মেম্বারকে দলীয় সভাপতির পদসহ সকল কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে পোঁছায়। মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত পুলিশ ওইস্থানে ছিলো। সকালে ভুক্তভোগীদের থানায় আনা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হবে এবং আসামিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছেন। দোষীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা চলছে। 

সোনালীনিউজ/এম/এসআই

Link copied!