সদা হাস্যোজ্জ্বল-বিনয়ী ও নিরপরাধ মীর হোসেন হত্যা: উপযুক্ত বিচার পাবে তো পরিবার?

  • মিঠু | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৯:৩৮ পিএম
সদা হাস্যোজ্জ্বল-বিনয়ী ও নিরপরাধ মীর হোসেন হত্যা: উপযুক্ত বিচার পাবে তো পরিবার?

ঢাকা: হত্যা করা কি এখন এতই সহজ? চাইলেই কি বর্তমান যুগে মানুষকে মেরে ফেলা যায়? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুবই সহজ। হ্যাঁ, চাইলেই মানুষকে হত্যা করা যায়।

অন্তত হত্যাকারীরা তাই মনে করে। তাদের ধারণা মন চাইল, টাকার জন্য কিংবা মাদকের জন্য মানুষ হত্যা কোনো বিষয় নয়। ধরা খেলে জেল-জরিমানা, তারপর খালাস। ফাঁসি তো হবে না।

অবশ্য তাদের এই ধারণার জন্য তারা একা দায়ী নয়, এর জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী বিচার-ব্যবস্থা আর সমাজ ব্যবস্থার অধঃপতন। যতদিন এই বিষয়গুলো ঠিক করা যাবে না ততদিন এসব নৃশংস ঘটনারও হয়তো শেষ হবে না।

সাধারণত একটি হত্যাকাণ্ডের অনেকগুলো কারণ থাকে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, জমি-সংক্রান্ত বিরোধ কিংবা লেনদেন সংক্রান্ত কোনো কারণ। আরো অসংখ্য কারণ থাকতে পারে একটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে। যেগুলো ঘটনা ঘটার পর অটোমেটিক সামনে চলে আসে। কিন্তু এমন এক হত্যাকাণ্ড ঘটল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রাজগঞ্জ ইউনিয়নে। যেই হত্যাকাণ্ডের সঠিক কোনো কারণ এখন পর্যন্ত কেউ বলতে পারছে না। 

বলছিলাম সদা হাস্যোজ্জ্বল-বিনয়ী ও নিরপরাধ মীর হোসেনের কথা। যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। নিখোঁজের দুইদিন পর পরিত্যক্ত একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কথায় আছে এমন জীবন করিও গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন। মীর হোসেনের মৃত্যুটা যেন ঠিক সেরকমই। যার মৃত্যুতে স্তব্ধ-শোকাহত পুরো রাজগঞ্জ ইউনিয়ন। 

Caption

মীর হোসেন মরে গিয়েও যেন অমর। তার দেহটা নেই কিন্তু ভালো মানুষ হিসেবে তার গুনাবলী পুরো ইউনিয়নবাসীর হৃদয়ে গেঁথে থাকবে সবসময়। সদা হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী আচরণ এবং সংযত কথা-বার্তার মধ্য দিয়ে যিনি হাজারো মানুষের প্রশংসা অর্জনের সম্মুখসারির একজন।

ব্যক্তিগত জীবনে মীর হোসেনের এটাই বড় সাফল্য। যার নিখোঁজ হওয়ার খবরে ব্যথিত হয়েছে সবাই। একের পর এক পোষ্ট ভেসে উঠেছে ফেসবুকের পাতায়। ব্যক্তিগতভাবে তাকে যারা চেনেন প্রত্যেকেই উদগ্রীব ছিলেন কখন সবার মাঝে আবারো ফিরে আসবে সদা হাস্যোজ্জ্বল ছেলেটা। কিন্তু মীর হোসেন ফিরলেন লাশ হয়ে। আর বার্তা দিয়ে গেলেন এই পৃথিবী ভালো মানুষের থাকার জায়গা নয়। 

সন্তান নিখোঁজের পর থেকেই বাকরুদ্ধ ছিলেন মীর হোসেনের বাবা-মা। তারপরও ভেবেছিলেন ছেলের যেহেতু কোনো শত্রু নেই। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবেন। কিন্তু সন্তানের লাশ পাওয়ার পর দিশেহারা বাবা-মায়ের একটাই দাবি। উপযুক্ত শাস্তি হবে খুনিদের। স্বামী হারা স্ত্রী আর এতিম হয়ে যাওয়া কোলের সন্তানেরও একই আকুতি। 

কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ১২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য না পাওয়া এমনকি হত্যাকারীদের সম্পর্কে কোনো প্রমাণ না পাওয়া সমাজ সচেতন নাগরিকদের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে, ধরা পড়বে তো অপরাধীরা? উপযুক্ত বিচার পাবে তো পরিবার?

অবশ্য ঘটনার তদন্তে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের সঙ্গে মাঠে নেমেছে র‍‍্যাব ও ডিবি। তাদের আশ্বাস খুব শিগগিরই ধরা পড়বে হত্যাকারীরা। তবে কোনো ক্লু না থাকায় অপরাধীদের ধরা একটু সময়ের ব্যাপার বলেও জানিয়েছেন তারা। 

মীর হোসেনকে নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের কথাই বলে দেয় মানুষের হৃদয়ের কতটুকু স্থান দখল করে নিয়েছিলেন তিনি।

মীর হোসেনকে নিয়ে তার এলাকাবাসী এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা জানান, মীর হোসেন অত্যন্ত শান্ত-স্বভাবের একজন মানুষ ছিলেন। সে সর্বজনসীকৃত একজন ভালো মানুষ। তার খুন হওয়ার কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো না।

কখনো মনে হয়নি তার কোনো শত্রু থাকতে পারে। সে বিগত সময়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়তি থাকলেও ততটা সক্রিয় ছিলো না। যার কারণে তার রাজনৈতিক কোনো শত্রু থাকতে পারে বলেও মনে হয় না। কী কারণে তাকে হত্যা করা হল সেটা জানার জন্য এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির অপেক্ষায় আছি।

মীর হোসেনের কর্মস্থল সোলায়মান ট্রেডার্সের মালিক ও রাজগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি জিসান জানান, আমার বিশ্বস্ত একজন কর্মী ছিলেন। আমার ব্যবসার সবকিছুই মীর হোসেনের দায়িত্বে ছিল।

তার মতো ম্যানেজার থাকায় আমি নিশ্চিন্তে ছিলাম। তার সঙ্গে কারো ঝামেলা কিংবা ঝগড়া-বিবাদ দেখিনি। তারপরও তাকে খুন হতে হলো। এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস করার মতো না। তার মতো সহকর্মীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছি।

এআর

Link copied!