কাপ্তাইয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমার প্রস্তুতি সম্পন্ন

  • চট্টগ্রাম ব্যুরো | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
কাপ্তাইয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমার প্রস্তুতি সম্পন্ন

চট্রগ্রাম: আলো, প্রার্থনা আর আত্মশুদ্ধির আহ্বান নিয়ে কাপ্তাইয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হতে যাচ্ছে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব। পাহাড়জুড়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে এখন সাজ সাজ রব। সোমবার থেকে শুরু দুই দিনের উৎসব ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজক, তরুণ-তরুণী এবং বিহার সংশ্লিষ্ট সবাই।

আশ্বিনের পূর্ণিমা তিথিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় এই ধর্মীয় উৎসব। যার মূল বার্তাই হলো আত্মশুদ্ধি, অহিংস জীবনযাপন এবং সত্য ও সুন্দরকে বরণ করা।

চিৎমরম, রাইখালী, হরিণছড়া, ব্যাঙছড়ি মারমা পাড়া, ওয়াগ্গার নোয়াপাড়া, কুকিমারা, সাপছড়ি তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া, মুরালি পাড়া, বারঘোনিয়া ও মিতিংগ্যা ছড়িসহ কাপ্তাইয়ের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় উৎসবের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

প্রতিটি বিহারে সাজসজ্জা, প্রদীপ প্রজ্বলন এবং ধর্মীয় দেশনা গ্রহণের আয়োজন চলছে। রথযাত্রার জন্য তৈরি হচ্ছে ময়ুরের আদলে নির্মিত রথ, যেটি মঙ্গলবার বিকেলে নারানগিরি থেকে জোগনাছড়ি প্রদক্ষিণ শেষে মাঝিপাড়ায় গিয়ে শেষ হবে। পরে সেই রথ বিসর্জন দেওয়া হবে কর্ণফুলী নদীতে।

রোববার থেকে পাহাড়ের ঘরে ঘরে তরুণ-তরুণীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে নানা রকমের পিঠা ও পাহাড়ি খাবার তৈরিতে। উৎসব উপলক্ষে পাহাড়ি বাজারে জমেছে কেনাকাটার ভিড়। শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাই নয়, উৎসবটি হয়ে উঠেছে সামাজিক মিলনেরও একটি বড় উপলক্ষ।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা এ সময় বিহারে গিয়ে পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও দশশীল গ্রহণ করেন। এতে তারা অহিংসা, পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মন্ত্রে দীক্ষিত হন। দায়ক-দায়িকারা মোমবাতি, ধূপকাঠি প্রজ্বলন করে, ভিক্ষুদের জল ও খাদ্য দান করেন। প্রতি বিহারে ধ্বনিত হবে গৌতম বুদ্ধের দেশনা, সব জীবের মঙ্গল কামনায় চলবে বিশেষ প্রার্থনা।

প্রবারণা পূর্ণিমা শুধু একটি উৎসব নয়, এটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক গভীর আধ্যাত্মিক উপলক্ষ। আষাঢ়ী পূর্ণিমার পর তিন মাস বর্ষাবাস পালন শেষে এই দিনে গৃহত্যাগ, মাতৃগর্ভে প্রতিসন্ধি ও ধর্মচক্র প্রবর্তনের স্মরণে উৎসবটি উদযাপন করা হয়। পাহাড়ের মানুষদের কাছে এটি শুভ আর শুদ্ধতার দিন।

বাংলাদেশ মারমা ঐক্য পরিষদ এবং তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থার নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, প্রবারণা হলো অশুভকে বর্জন করে শুভকে আলিঙ্গন করার দিন। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে পাহাড়জুড়ে ছড়িয়ে পড়বে আলোর বার্তা।

আকাশে উড়বে রঙিন ফানুস, রথে উঠবেন গৌতম বুদ্ধ, হৃদয়ে জ্বলে উঠবে আত্মশুদ্ধির দীপ। পাহাড় এবার উৎসবে ভাসবে এক অপার শান্তির আবহে।

এসএইচ

Link copied!