ত্রিশ বছর ধরে পথে পথে খবর পৌঁছে দিচ্ছেন স্বপন কুন্ডু

  • নড়াইল প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৪:০৯ পিএম
ত্রিশ বছর ধরে পথে পথে খবর পৌঁছে দিচ্ছেন স্বপন কুন্ডু

ছবি: প্রতিনিধি

চিত্রা নদীর পাড়ে সূর্য ওঠার আগেই গ্রাম থেকে সাইকেল চালিয়ে শহরে এসে থামেন স্বপন কুন্ডু (৫৭)। হাতিরবাগান বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতীক্ষা-যশোরমুখী বাস থেকে কখন নামবে দিনের পত্রিকার বান্ডেল। বান্ডেল হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর চেহারায় ফুটে ওঠে এক আলাদা তাগিদ। দ্রুত রিল খুলে সাজিয়ে নেন বাইসাইকেলের সামনে থাকা ব্যাগে এবং পেছনের ক্যারিয়ারে। তারপরই ভোরের নরম আলো মিশে যায় তাঁর সেই পরিচিত ডাকের সঙ্গে-‘এই খবর আছে, খবর! আজকের তাজা খবর।’

পথচারীরা কেউ একটি, কেউ দুটি কপি কিনে নেন। কয়েক মিনিটের ব্যস্ততা কাটতেই স্বপনের সাইকেল ছুটে যায় শহরের রাস্তায়-দোকানপাট, বাসাবাড়ি, অফিস-আদালত-সবখানে খবর পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে।

গত মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে ঘুরে দেখা গেল নড়াইলের এই দীর্ঘদিনের খবরবাহকের প্রতিদিনের সংগ্রাম। বাড়ি সদর উপজেলার হাটবাড়িয়া গ্রামে। সেখান থেকে প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে শহরে আসেন তিনি। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এ কাজই তাঁর রোজকার পেশা। সংসারে স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও বৃদ্ধ শাশুড়ি-সবাইকে চালাতে হয় তাঁর উপার্জনে। ছেলে মাস্টার্সে পড়ছেন, মেয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে।

স্বপন কুন্ডু বলেন, যুবক বয়সে শূন্য হাতে বিয়ে করেছিলেন। সংসারের অবস্থা তখন খুবই খারাপ। বাড়ির পাশের সাংবাদিক অশোক কাকা আর যশোরের লোকসমাজ পত্রিকার তৎকালীন ম্যানেজার বাদল ভাইয়ের উৎসাহে শুরু করেন পত্রিকা বিক্রি। ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ পেশাই তাঁর ভরসা। এই আয়ে ঘর তুলেছেন, ছেলে-মেয়েকে পড়াচ্ছেন।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাগজের পাঠক কমছে। তিনি বলেন, শুরু করেছিলেন মাত্র ১৫ কপি দিয়ে। একসময় ৪০০ কপি বিতরণ করতেন। পরে লোকসমাজ কমলেও অন্য পত্রিকার সংখ্যা বাড়ে। এখন অনলাইনের যুগে কাগজের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তরুণেরা আর তেমন কাগজ কেনেন না। স্থানীয়–জাতীয় মিলিয়ে এখন আড়াইশো কপি চালান তিনি।

আগে তাঁর আয় হতো ১৪–১৫ হাজার টাকা-সংসার চালিয়ে কিছু সঞ্চয়ও থাকত। এখন আয় নেমে এসেছে ১০–১২ হাজার টাকায়, তা-ও কষ্টে টিকে আছে। নতুন কেউ আর এই পেশায় আসে না। তবু কাজের প্রতি নিজের ভালোবাসা তাঁকে ধরে রেখেছে।

রোদ-বৃষ্টি-ঝড়-কোনো কিছুতেই থামে না তাঁর পথচলা। নিজের জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনেও দায়িত্ব নিয়ে থামেননি। শহরে এসে খবর পেয়েছিলেন তাঁর মা মারা গেছেন। তবু কাঁদতে কাঁদতেই তিনি পত্রিকা পৌঁছে দিয়েছিলেন গ্রাহকের হাতে। এভাবেই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন তিন দশক ধরে।

এই দীর্ঘদিনের নিষ্ঠার কারণেই তাঁর প্রতি আস্থা তৈরি হয়েছে গ্রাহকদের। নড়াইল শহরের গ্রাহক রেজাউল ইসলাম বলেন, বহু বছর ধরে স্বপন বাবু নিয়মিত খবর পৌঁছে দেন। তাঁর মতো নির্ভরযোগ্য পত্রিকা বাহক খুব কমই পাওয়া যায়।

এসএইচ 
 

Link copied!