লক্ষ্মীপুর-৪ আসন

কে হচ্ছে বিএনপি ও জোটের প্রার্থী, আলোচনায় নিজান-তানিয়া রব

  • জামাল উদ্দিন বাবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
কে হচ্ছে বিএনপি ও জোটের প্রার্থী, আলোচনায় নিজান-তানিয়া রব

ছবি: প্রতিনিধি

রামগতি ও কমলনগর উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন। এই আসনের মানুষের প্রধান সমস্যা নদীভাঙন। নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়, প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতি দেন। তবে কাজের কাজ কিছুই হয় না। এবারও ভোটাররা বলছেন, তারা তাকেই ভোট দেবেন, যিনি শুধু প্রতিশ্রুতি দেবেন না-কাজও করে দেখাবেন। ফলে আবারও প্রতিশ্রুতির ঝুড়ি নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন এই আসনের প্রার্থীরা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসছেন। নেতাকর্মী–সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের কাছে টানার কৌশল খুঁজছেন তারা। সাংগঠনিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে তাদের।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর নতুনভাবে জেগে উঠেছেন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা তৃণমূলের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিন মাস ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি বাড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)।

স্থানীয়রা বলছেন, এ আসনে এবার ফ্যাক্ট জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। জোটগত কারণে বিএনপি আসনটি জেএসডিকে ছাড়তে পারে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে আ স ম আবদুর রব বর্তমানে শারীরিকভাবে অসুস্থ। ফলে তাঁর স্ত্রী তানিয়া রব বিএনপি জোটের প্রার্থী হতে পারেন-সেটা অনেকটা নিশ্চিত।

তবে দলীয় এই সিদ্ধান্তে নাখোশ বিএনপির সহ-শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। তিনি এই আসনের দুইবারের সংসদ সদস্য (এমপি)। ফলে জেএসডিকে মাঠ ছেড়ে দিতে রাজি নন তিনি। বিএনপি জোট থেকে জেএসডির জন্য আসনটি ছেড়ে দিলেও নিজান ভোটের মাঠে থাকবেন বলে নেতাকর্মীদের আগাম বার্তা দিচ্ছেন। এ নিয়ে দলের একাধিক সভায় প্রকাশ্যে কথা বলেছেন বিএনপির এই মনোনয়নপ্রত্যাশী।

এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজান কাজ শুরু করছেন। আমরা আশা করছি, খুব শীঘ্রই এ আসনে নিজান প্রার্থিতা নিয়েই আপনাদের সামনে হাজির হবেন।

বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে যোগাযোগ রাখছেন আশরাফ উদ্দিন নিজান, তানিয়া রব, জামায়াতে ইসলামের প্রার্থী এ আর হাফিজ উল্লাহ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপদেষ্টা খালেদ সাইফুল্লাহ।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৫ হাজার ৬৪১ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৯৮ হাজার ২০৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন। এই আসনে ১৯৮৬ সালে আ স ম আবদুর রব (জাতীয় পার্টি), ১৯৮৮ সালে মোশাররফ হোসেন (সম্মিলিত বিরোধী দল), ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আবদুর রব চৌধুরী (বিএনপি) এবং ১৯৯৬ সালের জুনের নির্বাচনে আ স ম আবদুর রব (জাসদ), ২০০১ ও ২০০৮ সালে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান (বিএনপি), ২০১৪ সালে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (আওয়ামী লীগ), ২০১৮ সালে আবদুল মান্নান (বিকল্পধারা) এবং ২০২৪ সালে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (স্বতন্ত্র) এমপি নির্বাচিত হন।

কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন গ্রামের স্কুলশিক্ষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‌‘নদী আমাদের সব শেষ করে দিচ্ছে। একবার দুইবার নয়-অনেকেই আছেন, ৮-১০ বার করে ভাঙনের শিকার হয়েছেন। বারবার ঘরবাড়ি সরাতে হচ্ছে। এক সময়ের জমিদাররাও এখন রাস্তায় থাকেন-এমন উদাহরণও আছে। নির্বাচনে যারাই জিতুক, আমরা এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চাই।’

রামগতির চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান দিদার উদ্দিন বলেন, ‘এমপি প্রার্থীরা নির্বাচন এলে ভাঙনরোধে শুধু প্রতিশ্রুতি দেন, কাজ করেন না। আমরা কাজ দেখতে চাই।’

হাজীরহাট উপকূল কলেজের শিক্ষার্থী পারুল পারভিন বলেন, ‘আমি নতুন ভোটার হয়েছি। যে প্রার্থী নদীভাঙন রোধে ভালো ভূমিকা রাখবেন, তাকেই আমরা ভোট দেব। আমরা জন্মভূমির ঘরভিটা রক্ষার দাবি জানাই।’

জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের প্রার্থী এ আর হাফিজ উল্লাহ বলেন, ‘আমি জামায়াতে ইসলামী মনোনীত দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী। প্রতি মাসে অন্তত ২০ দিন কমলনগর–রামগতিতে সফর করি। একদিন এক ইউনিয়নে যাচ্ছি, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটাররাও পজিটিভ। বিশেষ করে ডাকসু নির্বাচনের পর আমাদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। আশা করি আমি জয়লাভ করব।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তারপরও আমাদের ওয়ার্ড ও কেন্দ্র কমিটি করা হচ্ছে। গ্রামগঞ্জে মানুষের কাছে অনেক সাড়া পাচ্ছি।’

আ স ম আবদুর রবের স্ত্রী ও জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব বলেন, ‘রব সাহেব অসুস্থ বিধায় আমিই নির্বাচনে অংশ নেব। বিএনপির সঙ্গে আমরা জোটগতভাবে আন্দোলনে মাঠে ছিলাম। এখন নির্বাচন হবে-তা নিয়ে বোঝাপড়া হচ্ছে। মাঠে আমরা নারীদের নিয়ে কাজ করছি। আ স ম আবদুর রবের উন্নয়নমূলক কাজগুলোই আমার শক্তি।’

দলের বাইরে জেএসডির কাউকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মানবেন না-এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজানের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তানিয়া রব বলেন, ‘আমাদের বিষয়ে তারেক রহমান চিঠি দিয়েছেন। তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। যিনি এসব কথা বলেন—তিনি কি তারেক রহমানের চেয়ে বড় কিছু?’

মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, ‘দল আমাকেই এই আসনে নির্বাচন করার জন্য মনস্থির করে রেখেছে। আশা করি আমি মনোনয়ন পাব। তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা যাচ্ছি, নিয়মিত নারী সমাবেশ করছি। বিগত দিনে আমাদের ১৩ হাজার নেতাকর্মীকে মামলার আসামি করা হয়েছিল। তারা আমার সঙ্গেই আছেন।’

এসএইচ 
 

Link copied!