খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যা বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২০, ০৬:৪৩ পিএম
খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যা  বললেন অ্যাটর্নি জেনারেল

ফাইল ছবি

ঢাকা: রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বার্হী আদেশে মুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। এখন মেয়াদ বাড়াতে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে।

সোমবার (১৭ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।  

গত ২৫ মার্চ পরিবারের আবেদনে সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। যিনি দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে কারাবন্দি ছিলেন। এর মধ্যে ছয় মাসের মেয়াদও ফুরিয়ে আসছে। 

আরও পড়ুন: সিনিয়র নেতাদের সামনেই বিএনপিকে ধুয়ে দিলেন ভিপি নুর

এদিকে, মেয়াদ শেষ হলে ফের কোথায় আবেদন করতে হবে এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, যেহেতু সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে আপাতত মুক্তি দিয়েছেন, মুক্তি বলবো না বাইরে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং, এই সময়টা পার হলে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। এখানে আদালতের কোনো বিষয় না।

দণ্ডিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ওই ভবন থেকেই পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর সেখান থেকে গত বছরের ১ এপ্রিল তাকে নিয়ে আসা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। এতদিন তিনি কারাবন্দি অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

পরে তার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে। ২৪ মার্চ বিকেলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমার কাছে একটা দরখাস্ত করেছিলেন খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়ার জন্য। সেখানে বলেছেন লন্ডনে উন্নতর চিকিৎসার জন্য মুক্তি চান। পরে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার, তার বোন সেলিমা ইসলাম, তার বোনের স্বামী রফিকুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই বিষয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এবং সেখানেও এই আবেদনের ব্যাপারে কথা বলেছেন।  

এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার শর্তে এবং উক্ত সময়ে তিনি দেশের বাইরের গমন না করার শর্তে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মতামত কিছুক্ষণ আগে পাঠিয়েছি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই তিনি মুক্তি পাবেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।

পরদিন দীর্ঘ দু’বছর এক মাস ১৬ দিন পর মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় যান। কিন্তু করোনার কারণে তার আর কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া হয়নি।

ঈদের পরের দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। বিদেশে তার হাঁটু রিপ্লেস করা হয়েছিল। সেখানে সারাক্ষণ ব্যথা থাকে। সেজন্য চিকিৎসা নিতে তার বিদেশে যেতে হবে।

এদিকে পারিবারিক সূত্র বলছে, সরকারের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে পাঠাতে চাচ্ছেন তারাও। পরিবারের সদস্যরা এজন্য সরকারের উচ্চ মহলে দেন-দরবারও করছেন। প্রয়োজনে তারা আবারও সরকার প্রধানের দ্বারস্থ হতে পারেন।  

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেয়ে বন্দি (বিএসএমএমইউতে বর্তমানে চিকিৎসাধীন) রয়েছেন খালেদা জিয়া। ওই মামলায় আপিলের পর হাইকোর্টে যা বেড়ে ১০ বছর হয়। পরে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সেই আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

এর মধ্যে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সাজা হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও।

এরপর ওই বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। পরে গত বছরের ৩০ এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত ও সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

এরপর গত ২০ জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পরে ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে জামিন চান খালেদা জিয়া। এ আবেদনের শুনানির পর ১২ ডিসেম্বর সেটি খারিজ হয়ে যায়। তখন আপিল বিভাগ বলেছিলেন খালেদা জিয়া রাজি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে। এরপর ফের হাইকোর্টে জামিন চান খালেদা জিয়া। ২৭ ফেব্রুয়ারি সে আবেদন খারিজ করে সম্মতি দিলে দ্রুত তাকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা দিতে হবে এবং মেডিক্যাল বোর্ড চাইলে নতুন চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন বলে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Link copied!