তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে দায়ের করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের ওপর পঞ্চম দিনের মতো শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ১০টায় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ শুনানি কার্যক্রম শুরু করে। আজকের শুনানিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন ব্যারিস্টার মো. শাহরিয়ার।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবিতে রিভিউ আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শুরু হয় গত ২১ অক্টোবর। প্রথম দুই দিন রিটকারী বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
এরপর ২৩ অক্টোবর তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে মামলাটি স্থগিত হয়। চতুর্থ দিনের মতো গত ২৮ অক্টোবর শুনানি করেন জামায়াতের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
গত শুনানিতে প্রধান বিচারপতি রেফাত আহমেদ বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিয়ে সাময়িক সমাধান নয়, আপিল বিভাগ এমন একটি কাঠামো চায় যা ভবিষ্যতে নির্বাচনী সংকটের স্থায়ী সমাধান দেবে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষাই এই আদালতের মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, যদি আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে সেটি কোন তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গত দেড় দশকে দেশে “শাসনের নামে শোষণ” হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, “গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং রাজনৈতিক নিপীড়ন ছিল প্রতিদিনের বাস্তবতা। জনগণ সেই অন্যায়ের বিচারই রাজপথে করেছে।”
১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু হয়। কিন্তু এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে তিন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
২০০৪ সালে হাইকোর্ট রায় দেয়— তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ। তবে ২০০৫ সালে বিষয়টি আপিল বিভাগে ওঠে, যেখানে আদালত আটজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন।
তাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মত দেন।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি বাতিলের পক্ষে ছিলেন। ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার সংস্কারের প্রস্তাব দেন।
২০১১ সালের ১০ মে, আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেন। পরবর্তীতে একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়।
এরপর থেকে টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দলটির পতনের পর নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি তোলে।
২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট প্রথম রিভিউ আবেদন করেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, তোফায়েল আহমেদ, এম. হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভুঁইয়া ও জাহরা রহমান।
এরপর পৃথকভাবে আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (১৬ অক্টোবর), জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (২৩ অক্টোবর) এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন।
সব আবেদন একত্রে শুনানির জন্য গ্রহণ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। গত ২১ অক্টোবর থেকে মামলাটির শুনানি শুরু হয়, যা আজ পঞ্চম দিনের মতো চলছে।
এম
আপনার মতামত লিখুন :