রংপুরে হাসপাতালে অসুস্থ বাবাকে রেখে তিন দিন আগে ঢাকায় এসেছিলেন কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক (৪২)। সঙ্গে ছিলেন বন্ধু মালয়েশিয়া ফেরত জরেজ মিয়া। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছানোর পর থেকে আশরাফুলকে আর ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। স্ত্রী লাকী বেগম যতবার স্বামীর খোঁজ করেছেন, প্রতিবারই জরেজ মিয়ার কাছ থেকে এসেছে একই উত্তর— “ব্যস্ত আছে, পরে কথা বলবে।”
অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হাইকোর্টের পাশে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের গেটের কাছে নীল রঙের দুটি ড্রামের ভেতর থেকে যখন ২৬ টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ, তখনই মিলে যায় সেই নিখোঁজ ব্যবসায়ীর পরিচয়। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করে— খণ্ডিত লাশটি রংপুরের বদরগঞ্জের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের।
শেষ ফোনালাপ থেকে নিখোঁজ
আশরাফুলের শ্যালক আব্দুল মজিদ জানান, মঙ্গলবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে অসুস্থ বাবাকে রেখে ঢাকায় রওনা হন আশরাফুল। মালয়েশিয়া থেকে সদ্য ফেরা বন্ধু জরেজ মিয়া তাকে সঙ্গ দেয়।
মজিদ বলেন, “বুধবার বিকেল ৫টায় বোনের সঙ্গে আশরাফুলের শেষ কথা হয়। তারপর ফোন ধরেনি। বোন ফোন দিলে জরেজই রিসিভ করে বলে— ‘কালেকশনে গেছে।’”
বৃহস্পতিবার দুপুরেও ফোন ধরেন জরেজ। কিন্তু আশরাফুলকে ফোন দেননি। পরে আশরাফুলের স্ত্রী জরেজ মিয়ার স্ত্রীর কাছে গেলে জরেজ জানান— “আশরাফুলের ফোন ড্রেন থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি!”
এরপরই লাকী বেগম থানায় গিয়ে জানতে পারেন স্বামীর লাশ ঢাকায় উদ্ধার হয়েছে। শোনামাত্রই তিনি ভেঙে পড়েন। পরিবার বলছে— “দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই।”
টাকার লেনদেন নিয়ে বিরোধ?
স্থানীয় সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া ফেরত জরেজ মিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধুত্বের সুবাদে আশরাফুলের সঙ্গে মিশতেন। কয়েকদিন আগে তিনি আশরাফুলের কাছে মোটা অংকের টাকা ধার চান। সন্দেহ করা হচ্ছে— টাকা না পাওয়া বা আর্থিক দ্বন্দ্ব থেকেই খুনের ঘটনা ঘটতে পারে।
শান্ত, সাদাসিধে মানুষের নির্মম পরিণতি
গ্রামবাসীদের ভাষ্যে, আশরাফুল ছিলেন সহজ-সরল, সামাজিক কাজে আগ্রহী ও সাহায্যপ্রবণ মানুষ। ব্যবসায়িক কারণে তিনি ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ–আলু আমদানির লাইসেন্সধারী ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে জমির রেজিস্ট্রির ওয়ারিশ সনদ সংগ্রহ করেন। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায় করে বাবাকে হাসপাতালে রেখে রাতে ঢাকায় রওনা হন— সেখান থেকেই তার জীবনের শেষ অধ্যায় শুরু।
মামলা ঢাকায়, তদন্তে দুই থানার সমন্বয়
বদরগঞ্জ থানার ওসি একেএম আতিকুর রহমান জানান, নিহতের স্ত্রীসহ স্বজনরা থানায় এসেছিলেন। তারা যে তথ্য দিয়েছেন, তা রমনা ও শাহবাগ থানাকে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি ঢাকাতে হবে। পরিবারও ঢাকায় যাচ্ছে।
কোথায়, কীভাবে খুন— রহস্যে পুলিশ
ড্রামে ভরা লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ধারণা করছে— খুনটি ঢাকার কোনো ভেতরের এলাকায় হয়েছে, পরে লাশ টুকরো করে ড্রামে ভরে ঈদগাহ এলাকার নিরিবিলি কোণে ফেলা হয় । এতে দু’জন বা তার বেশি লোক জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি
এম
আপনার মতামত লিখুন :