‘ধর্ষণের পর ধামাচাপা দিতে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন ভণ্ডপীর’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৩, ০১:২০ পিএম
‘ধর্ষণের পর ধামাচাপা দিতে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন ভণ্ডপীর’

ঢাকা:  কুমিল্লার দেবিদ্বারে লিচু দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষক ভন্ডপীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইন’কে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। 

রাজধানীর মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। 

সোমবার (১৯ জুন) কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ২ জুন কুমিল্লার দেবিদ্বারে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ১টি মামলা দায়ের করেন। উক্ত ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ অভিযানে গত রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষক ভন্ডপীর মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর মো. ইকবাল হোসাইনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃতকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২ জুন দুপুর ১২টায় ভুক্তভোগী ইকবালের বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গেলে সে শিশুটিকে লিচু দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তার আস্তানায় ডেকে নিয়ে কৌশলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। 

একপর্যায়ে শিশুটি সেখান থেকে পালিয়ে বাড়িতে আসলে তার মা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাঁপা দেয়ার জন্য ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে গ্রেপ্তারকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে তার নিজ আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরীদ এবং স্বনামধণ্য একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ তার বাড়িতে একটি আস্তানা গড়ে তোলে। তার ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় সে শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতো না বিধায় বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়ে ও মোবাইলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল শুনে কিছু ধর্মীয় বিষয় মুখস্ত করে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় জমজমাট আসর বসিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দিতেন এবং নিজ আস্তানার বাহিরেও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতেন। 

তার আস্তানায় আগত লোকজন মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করতো বলে জানা যায়। এছাড়াও সে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের এবং তার আস্তানার বিভিন্ন আইডি ও পেইজ খুলে আস্তানার প্রচার-প্রচারণা করে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতো। 

ইতোপূর্বে সে বেশ কয়েকবার অসামাজিক কার্যক্রমে লিপ্ত হলে স্থানীয় লোকদের নিকট ধৃত হয় এবং পরবর্তীতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট অঙ্গিকারনামা দিয়ে সেখান থেকে ছাড়া পায়। তার অন্ধ ভক্তরা তাকে হাদিয়া স্বরূপ টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার ও গবাদী পশু ইত্যাদি প্রদান করত যা সে নিজের ও নিজের আস্তানার জন্য ব্যয় করতো বলে জানা যায়।  

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃত ইকবাল কুমিল্লার একটি স্থানীয় কলেজ হতে স্মাতক সম্পন্ন করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতো এবং স্থানীয় লোকজন তাকে প্রসেফর বলে ডাকত। একপর্যায়ে সে স্থায়ী কোন চাকুরী না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে কথিত পীর হিসেবে দাবি করে। 

পরবর্তীতে সে তার বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পীরের লেবাস ধারণ করে নামের শেষে শাহ সুন্নি আল কাদেরী উপাধি যুক্ত করে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে এলাকার স্থানীয় লোকদের অন্ধবিশ্বাসকে পুঁজি করে দীর্ঘদিন যাবত প্রতারণা করে আসছিল। 

গ্রেপ্তারকৃত ঘটনার পর হতে এলাকা থেকে পালিয়ে প্রথমে কক্সবাজার ও পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপন করে। সর্বশেষ সে তার স্থান পরিবর্তন করে রাজধানীর মিরপুরে তার এক পরিচিতের বাসায় আত্মগোপনে থাকাকালীন র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। 

সোনালীনিউজ/এআর

Link copied!