পে-স্কেল কোন পথে: ঘোষণা না কি অপেক্ষা?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম
পে-স্কেল কোন পথে: ঘোষণা না কি অপেক্ষা?

ফাইল ছবি

নতুন ৯ম জাতীয় বেতন স্কেল নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের অপেক্ষা তীব্রতর হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা দাবি করে আসছেন চূড়ান্ত গেজেট দ্রুত জারি করে কার্যকরে আনা হোক, অন্যদিকে সরকার বলছে বাস্তবায়নকে ঘিরে বাজেট ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিবেচনা করা জরুরি। সংক্ষিপ্তভাবে বললে, দুইটি সম্ভাব্য -একটি দ্রুত গেজেট জারি করে ১ জানুয়ারি ২০২৬ তারিখে কার্যকর করা এবং অপরটি গেজেট বা কার্যকরতার সিদ্ধান্ত নির্বাচন-সমপ্রসঙ্গে স্থগিত থেকে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাজে ছেড়ে দেওয়া-এখনই প্রধান সম্ভাবনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। 

সরকারি চাকরিজীবীদের সংগঠনগুলো ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত চূড়ান্ত গেজেট জারি করার আল্টিমেটাম দিয়েছে; তারা এই সময়সীমা মেনে না চললে কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুমকি দিয়েছে। এ দাবির পটভূমিতে প্রশাসন ও অর্থ বিভাগের মধ্যে তৎপরতা বাড়ে, কিন্তু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও বাজেট সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

অর্থনীতি ও সরকারি খরচে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হলে সরকারি ব্যয়ের পরিধি বড়ো আকারে বাড়বে বলে সরকারি সূত্র ও বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন; এ জন্য উন্নয়ন খাতে ব্যয় পুনঃসন্তুলনের প্রস্তাবও ওঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের সুযোগ কমাতে সরকার ধাপে ধাপে বা সীমিত পরিসরে বাস্তবায়নের বিকল্প খুঁজছে-অর্থাৎ পুরো প্যাকেজ একবারে নয়, ধাপে কার্যকর করার পথে ডিপার্টমেন্টাল বিকল্পও দেখা যাচ্ছে। 

সরকারি ইউনিয়নগুলো প্রস্তাবিত গ্রেডপদ্ধতি, বেতনের ন্যূনতম-সর্বোচ্চ অনুপাত এবং পেনশন-ভাতার ব্যাপারে রূপান্তর দাবি করেছে; কিছু রিপোর্টে ১:৪ অনুপাত ও সর্বনিম্ন বেতন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ সর্বত্র ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার আভাস দেওয়া হয়েছে, যদিও এ সংখ্যা চূড়ান্ত নয় এবং সরকারি সিদ্ধান্ত অপেক্ষমান। এই দাবিগুলো কেবল প্রস্তাবিত কাঠামোর সারমর্ম-চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত চূড়ান্ত রূপ নিশ্চয় নয়। 

১) গেজেট স্থরের সম্ভাবনা ও দ্রুত কার্যকর: যদি পুলিশের মতো প্রশাসনিক সমন্বয় ও রাজস্ব-সুবিধা মিলিয়ে শাসন ব্যবস্থাপনা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং ১৫ ডিসেম্বরের টাইমলাইন মেনে গেজেট জারি হয়, তাহলে সরকারি সূত্র এবং বিশ্লেষকদের ধার্য অনুযায়ী নবম পে-স্কেল ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এই ক্ষেত্রে বাজেটে বড়োসড়ো সমন্বয় দরকার হবে। 

২) নির্বাচনের কারণে স্থগিত বা পরবর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত: অর্থ উপদেষ্টা এবং সরকারি তরফের কিছু মন্তব্যের আলোকে যদি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এটি বিহিতকভাবে নির্বাচনের পরে প্রয়োগ করা উচিৎ, তবে গেজেট জারি হলেও বাস্তবায়ন পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেয়া হতে পারে। এর ফলে ২০২৬ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে। 

নবম পে-স্কেল তৎক্ষণাত কার্যকর হলে সরকারি বেতন ব্যয় দ্রুত বাড়বে; সেটি মুদ্রাস্ফীতি, রাজস্ব-ঘাটতি ও উন্নয়ন ব্যয়ের উপর চাপ ফেলতে পারে। অন্যদিকে জটিলতা ও স্থগিত থাকলে সরকারি কর্মচারীদের অসন্তোষ ও ধর্মঘট এবং প্রশাসনিক কাজে বিঘ্নের সম্ভাবনা থাকবে। এই দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের জন্য দরকার-স্বচ্ছ আর্থিক হিসাব, ধাপে বাস্তবায়ন পরিকল্পনা, এবং কর্মচারীদের সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয়। 

সরকারের উচিত মুক্ত হিসাব-প্রকাশ করে খরচ ও রাজস্বের ভারসাম্য ছকে ধাপে বাস্তবায়নের কৌশল উপস্থাপন করা; কর্মচারী সংগঠনগুলোকে অংশীদার করে অঙ্গীভূত টার্গেট-নির্ধারণ করে সময়সীমা নির্ধারণ করলে দুদিকের অনিশ্চয়তা কমবে। জনসাধারণ ও সাংবাদিকেরা এই প্রক্রিয়ার আর্থিক প্রভাব, গেজেটের চূড়ান্ত টেক্সট এবং প্রয়োগের নোটিফিকেশন লক্ষ্য রেখে আপডেট জানতে থাকবে তখনই বাস্তব চিত্র স্পষ্ট হবে। 

বর্তমানে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত ট্র্যাকটি হচ্ছে-চূড়ান্ত গেজেট যদি সরকার নির্ধারিত সময়ে জারি করে, তাহলে ১ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হওয়ার যোগ্য। আর গেজেট না থাকলে বা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে বাধার মুখে পড়লে সিদ্ধান্ত পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর চলে যেতে পারে। স্থিতিশীল ও স্বচ্ছ আর্থিক ব্যাখ্যা ও সমঝোতা ছাড়া কোনও পক্ষই পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো বাস্তবায়ন আশা করা সম্ভব হবে না।

এসএইচ 
 

Link copied!