ছবি : প্রতিনিধি
ঢাকা: আস্থা ও তারল্য সংকটে দেশের পুঁজিবাজার। বাজারে তারল্য বৃদ্ধির একটি উপকরণ মার্জিন ঋণ। তবে মার্জিন ঋণ নিয়ে অনেক বিনিয়োগকারীই নিঃস্ব হয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে লেনদেন ও তারল্য বৃদ্ধির সঙ্গে বিনিয়োগকারীর রক্তক্ষরণ বন্ধে মার্জিন ঋণের যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারে গঠিত টাস্কফোর্স।
পুঁজিবাজারের মার্জিন ঋণ আইন সংস্কারে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান করেছে টাস্কফোর্স। এতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণ পেতে হলে ন্যূনতম ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। থাকতে হবে ৬ মাসের বিনিয়োগের অভিজ্ঞতাও। সুনির্দিষ্ট আয়ের উৎস না দেখাতে পারলেও এই ঋণ সুবিধা মিলবে না। শুধু তাই নয়, স্পন্সর শেয়ার থাকা বিও হিসাবের বিপরীতে অর্থাৎ, কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরাও মার্জিন ঋণ সুবিধা পাবেন না।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
এ সময় টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ নেসারউদ্দীন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের শিক্ষক আল–আমিন উপস্থিত ছিলেন।
মার্জিন ঋণ আইনের সংস্কার সুপারিশের ওপর প্রেজেন্টেশন দেন টাস্কফোর্সের সহযোগিতায় গঠিত ফোকাস গ্রুপের সদস্য প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান।
এর আগে রোববার মার্জিন ঋণ আইন বিষয়ক চূড়ান্ত সুপারিশমালা বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে হস্তান্তর করেন টাস্কফোর্সের সদস্যরা।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির কাছে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে খসড়া সুপারিশ জমা দিয়েছিল টাস্কফোর্স। ওই খসড়া সুপারিশের ওপর সাধারণের মতামত আহ্বান করা হয়। ওই মতামত বিবেচনায় নিয়েই চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তুত করে টাস্কফোর্স।
সংবাদ সম্মেলেনে টাস্কফোর্স সদস্য আল-আমিন বলেন, খসড়া আইনের সঙ্গে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তেমন কোনো পার্থক্য নেই, অর্থাৎ বড় কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে ঠিকঠাক কাজটা করেছি। প্রত্যেক অংশীজনের সঙ্গে কথা বলার কারণে আমাদের সময় লেগেছে।
অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন বলেন, মার্জিন ঋণ আইনের সংস্কার সুপারিশ প্রদানের আগে যারা যারা ইনপুট দিতে পারে, তারা ছাড়াও সেক্টরের বাইরে যারা এক্সপার্ট, তাদের সঙ্গে বসেছি আমরা। তারপরেও যদি মনে হয়, আমরা বুঝি না, কোনো সুপারিশ থাকে, সেটাও ইনকরপোরেট করার সুযোগ আছে।
এ এফ নেসারউদ্দীন বলেন, আইনের সুপারিশ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমরা অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি। নিজেরাই সবকিছু করে ফেলব, এমনটা করিনি। অংশীজনদের মতামত নিয়েছি।
টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে সেসব বিনিয়োগকারীই ঋণসুবিধা পাবেন, যাঁদের ন্যূনতম ১০ লাখ টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। শুধু ১০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলেই হবে না, সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগের ৬ মাসের অভিজ্ঞতা না থাকলে সেসব বিনিয়োগকারীকেও ঋণসুবিধা না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। শর্ত পূরণের পর শেয়ারের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা যাচাইয়ের বিধান করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। ঋণগ্রহিতার সুনির্দিষ্ট আয়ের উৎস না থাকলেও ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া ঋণের মেয়াদ হবে ছয় মাস থেকে এক বছর। মেয়াদ শেষে তা আবার নবায়ন করা যাবে।
প্রেজেন্টেশন প্রদানের সময় মনিরুজ্জামান জানান, কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানির অ্যাকাউন্টে লক কিংবা লিয়েন শেয়ার, স্পন্সর শেয়ার, প্লেসমেন্ট শেয়ার, অতালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, বন্ড বা ডিবেঞ্চার, অতালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট থাকলে সেই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মার্জিন ঋণ সুবিধা মিলবে না।
কোন ধরনের শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা ঋণসুবিধা পাবেন, তার একটি তালিকা প্রতিদিন স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে প্রকাশ করার সুপারিশ করা হয়েছে টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘এ’ শ্রেণির কোম্পানি, যাদের মূল্য–আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৩০–এর বেশি হবে না, সেসব শেয়ারকে ঋণযোগ্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পিই রেশিও হতে হবে ২০।
ঋণদাতা কোনো প্রতিষ্ঠান তার বিতরণ করা ঋণের ২৫ শতাংশের বেশি একক কোনো শেয়ারে ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে না। ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতা সব বিনিয়োগকারীকে বিবেচনায় নিয়ে এই বিনিয়োগ সীমা পরিপালন করতে হবে। এ ছাড়াও অবসরে থাকা বিনিয়োগকারী, গৃহিণী ও শিক্ষার্থীদেরও মার্জিন ঋণসুবিধার বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এসআই
আপনার মতামত লিখুন :