দেশের বীমা খাতের সংকট দীর্ঘদিনের। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বীমা দাবি সময়মতো পরিশোধ না করা। এর ফলে ২০২৪ সালে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা কম। ২০২৩ সালে এই আয় ছিল ১২ হাজার ২৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে জীবন বীমা কোম্পানিগুলোর লাইফ ফান্ডে জমা পড়েছে মাত্র ৪১৫ কোটি টাকা—যা ২০২৩ সালের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ওই বছর জমা পড়েছিল ৯০৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে, লাইফ ফান্ডে জমা পড়ার হার ৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশে।
আইডিআরএ'র তথ্যমতে, ২০২২ সালে জীবন বীমা খাতের প্রিমিয়াম আয় ছিল ১১ হাজার ৩৯৩ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর আগের বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে আয় বেড়েছিল—২০২১ সালে ১০ হাজার ২৩২ কোটি ৫১ লাখ এবং ২০২০ সালে ৯ হাজার ৪৭৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২৪ সালে সেই আয় প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে লাইফ ফান্ডে জমার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ায় গ্রাহকরা ঝুঁকির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের শেষে দেশের ৩৫টি জীবন বীমা কোম্পানির সম্মিলিত লাইফ ফান্ড দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। অথচ ২০২৩ সালে এই বৃদ্ধির হার ছিল ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।
বিদায়ী বছরে প্রিমিয়াম আয়ের দিক থেকে শীর্ষস্থানে ছিল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে আয় করেছে ৩ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা, যার মধ্যে নিট আয় ৩ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমাণ ১৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স। তাদের মোট আয় ২ হাজার ১০১ কোটি এবং নিট আয় ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। কোম্পানিটির মোট সম্পদের পরিমাণ ৬ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স। তাদের প্রিমিয়াম আয় ৯৩১ কোটি এবং নিট আয় ৯১০ কোটি টাকা, আর মোট সম্পদ ৪ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন। ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্রিমিয়াম আয় ৮৬০ কোটি, নিট আয় ৮৪৯ কোটি এবং মোট সম্পদ ৩ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা।
পঞ্চম স্থানে রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। কোম্পানিটির মোট আয় ৭৯৯ কোটি এবং নিট আয় ৭৯৪ কোটি টাকা, আর মোট সম্পদ ৯৯৭ কোটি টাকা।
বীমা খাতে আয় সামান্য বেড়েছে বটে, তবে দাবি পরিশোধে অনিয়ম এবং গড়িমসির কারণে গ্রাহকদের আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে করে কাঙ্ক্ষিত হারে আয় বাড়ছে না।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম আসলাম আলম বলেন, "বীমা দাবি সময়মতো পরিশোধ না করাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। যেসব কোম্পানি দাবি পরিশোধে অনীহা দেখিয়েছে, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নয়ন হবে।"
বীমা খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইফ ফান্ডই হলো জীবন বীমা কোম্পানির মেরুদণ্ড। এই ফান্ড দুর্বল হলে কোম্পানিগুলোর আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তখন গ্রাহকের দাবি পূরণে প্রতিষ্ঠানগুলো দিশেহারা হয়ে পড়ে, যা পুরো খাতের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ওএফ
আপনার মতামত লিখুন :