ঋণের তথ্য যাচাইয়ে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক, থাকছে জরিমানাও

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
ঋণের তথ্য যাচাইয়ে কঠোর বাংলাদেশ ব্যাংক, থাকছে জরিমানাও

ছবি: সংগৃহীত

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি কি না, তা যাচাইয়ে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) ডাটাবেজ হালনাগাদ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, সিআইবিতে ভুল তথ্য দিলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করলে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি দায়ী কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক বা সংশ্লিষ্ট নির্বাহীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, এমনকি চাকরিচ্যুতির মতো কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহীদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ঋণতথ্য হালনাগাদ ও যাচাইয়ে কোনো গাফিলতি বা অবহেলা সহ্য করা হবে না। ভুল তথ্য বা অসম্পূর্ণ তথ্য দিলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরাসরি জবাবদিহিতার মুখে পড়বেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের সময় কেউ যেন অবৈধ সুবিধা নিতে না পারেন, সে বিষয়ে বিশেষ নজরদারি থাকবে। যদি কোনো কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক নয়, দুদক ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। এমনকি ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যদি কোনো খেলাপি প্রার্থী মনোনয়ন পান, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকেরও দায় থাকবে।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে সিআইবি রিপোর্ট নিয়ে অনেকে হেলাফেলা করতেন কিন্তু এখন সবাই সতর্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর আমরা সব তথ্য নতুন করে যাচাই করছি।’

নির্বাচনের আগে সঠিক ও হালনাগাদ তথ্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ইতোমধ্যে দুটি সভার উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৯ অক্টোবর, আরেকটি হবে আগামীকাল ৩ নভেম্বর। সভাগুলোয় তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিআইবি শাখার প্রধান ও রিপোর্টিং কর্মকর্তারা অংশ নিচ্ছেন।

এ বৈঠকগুলোতে মূলত সিআইবি ডাটাবেজে তথ্য আপলোডে প্রযুক্তিগত সমস্যা, তথ্যের নির্ভুলতা, আধুনিকায়নের প্রয়োজন এবং প্রার্থীদের ঋণতথ্য যাচাইয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মূল উদ্দেশ্য– নির্বাচনের আগে যেন কোনো তথ্য বিভ্রান্তি বা ত্রুটি না থাকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রার্থীদের ঋণতথ্য যাচাইয়ের এ উদ্যোগ নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। কারণ, প্রার্থীর আর্থিক অবস্থানই অনেকাংশে তার সততা ও দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।

সরকারের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, আগামী বছরের (২০২৬) ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কঠোর তদারকিকে অনেকে দেখছেন স্বচ্ছ ও নৈতিক নির্বাচন আয়োজনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে।

আইন অনুযায়ী, ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তাই মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি থাকলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। এ কারণে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া আপিলের শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনেও ঋণখেলাপি প্রার্থীদের ঠেকাতে ব্যাংক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রার্থীদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে তা মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে নবায়ন বা পরিশোধ করতে হয়। আর যথাসময়ে ঋণ নবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারেন। অন্যথায় প্রার্থী হতে পারবেন না। জাতীয় নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে ১৯৯১ সালে প্রথম খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

এএইচ/এম

Link copied!