পেঁয়াজর ঝাঁজে কাঁদছে ক্রেতা!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০১৭, ০৭:৩৫ পিএম
পেঁয়াজর ঝাঁজে কাঁদছে ক্রেতা!

ফাইল ফটো

ঢাকা: পেয়াঁজের ঝাঁজে কাঁদছে ক্রেতা! কথাটা শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। তবে বর্তমানে পেঁয়াজের লাগামহীন দামে রাজধানীর খুচরা বাজারের অবস্থা অনেকটা তেমনই। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেয়াঁজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। অথচ গত বছর এ সময়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দামে। এছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে। যেখানে এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮৫ টাকায়।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ১৫৩ শতাংশ আর আমদানি করা পেঁয়াজে ২০০ শতাংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির অব্যাহত দাম বৃদ্ধিতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। বিশেষ করে ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বাড়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজে যেন ‘আগুন’ লেগেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য টন প্রতি ৩৫২ ডলার বাড়ানো হয়।

শান্তিনগর বাজারের মতলব স্টোরে পেঁয়াজের দাম জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জানান, প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রথমে দাম বেড়ে ৯০ টাকা হয়। এরপর বাড়তে বাড়তে এখন ১০০ টাকা হয়েছে।

সর্বশেষে কতদিন আগে ১০০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন -জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করি। একবার রোজায় মাঝে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়ে ছিল। সেটা তাও ৫-৭ বছর আগে। সাম্প্রতিক সময়ে আর কখনো পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়নি।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, অক্টোবরে যেখানে প্রতি টন পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য ছিল ২৫০ ডলার। সেটা কয়েক দফায় এটি বাড়িয়ে ৫শ’ ডলার করা হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) তা একলাফে ৮৫২ ডলার নির্ধারণ করেছে ভারতের কৃষিজাত কাঁচা পণ্যের মূল্য নির্ধারণী সংস্থা (ন্যাফেড)। শনিবার (২৫ নভেম্বর) থেকে দেশের বাজারে ওই দাম কার্যকর করা হয়।

হিলি কাস্টমস’র কর্মকর্তা ফকর উদ্দিন জানান, নভেম্বর মাসের ২৩ দিনে (শুক্রবার বাদ দিয়ে) ১১ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে। আর দাম বাড়ার পর শনিবার (২৫ নভেম্বর) এ বন্দর দিয়ে মাত্র ১১ ট্রাকে ২২০ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২২ থেকে ২৪ লাখ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, আলোচ্য সময়ে দেশে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন। যা চাহিদার চেয়ে ৭ লাখ টন বেশি। তারপরও বাড়ছে পেঁয়াজর দাম। তাই মনে করা হচ্ছে সরকারি এসব হিসাবের মধ্যে কোথাও একটা ঝামেলা রয়েছে বা ব্যবসায়ীরা মুনাফা সর্বোচ্চ করার জন্যে খুব সচেতনভাবে প্রত্যেকটি ‘অপশন’ কাজে লাগাচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Link copied!