কুমিল্লা সরকারি গণগ্রন্থাগার

৪২ হাজার বই, নেই পাঠক!

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৬, ২০১৭, ০৩:১৩ পিএম
৪২ হাজার বই, নেই পাঠক!

কুমিল্লা: বই মানুষের মনোজগতকে শ্বাণিত করে। বই মানুষের পরম বন্ধু।  অবসরে বিনোদনও মিলে এই বই থেকে। কিন্তু প্রযুক্তির এই জীবনে বই পড়ার সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমছে। আর এর সাথে সাথে কমছে পাঠাগারের সংখ্যাও। এখন আর গ্রাম-গঞ্জে পাঠাগার ও পাঠক তেমন একটা দেখা যায় না।

‘‘পড়িলে বই আলোকিত হই’ না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’’। এটি কুমিল্লা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের স্লোগান। এ গ্রন্থাগারে রয়েছে ৪২ হাজার বই। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক পরিচালিত বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের বই সমৃদ্ধ একমাত্র সরকারি গ্রন্থাগার। সব মিলিয়ে যান্ত্রিক নগর জীবনে বই প্রেমিদের জন্য এক অপ্রত্যাশিত পাওয়া। কিন্তু প্ররিত্রাণের বিষয় কুমিল্লার সরকারি গণগ্রন্থাগারটি বর্তমানে একেবারে পাঠক শূণ্য।

অথচ দশটি স্তরে সু-সজ্জিত এ গ্রন্থাগারটিতে রয়েছে জীব বিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণি বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান, গ্রার্হস্থ অর্থনীতি, রসায়ন শিল্প, ধর্ম শাস্ত্র, জ্ঞানতত্ত্ব, রহস্য, শরীর ও মন, দার্শনিক তত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, অধিবিদ্যা, তর্কবিদ্যা, নীতিশাস্ত্র, আধুনিক দর্শন, পরিসংখ্যান, রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন শাস্ত্র, লোক প্রশাসন, শিক্ষা, ব্যবসা ও বাণিজ্য যোগাযোগ, লোক সাহিত্যে তত্ত্ব, গণিতশাস্ত্র, জ্যোতিশাস্ত্র, ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞান, প্রত্ম জীববিজ্ঞান, নির্মাণ শিল্প, গৃহ নির্মাণ শিল্প, শোভন-শিল্পকলা, স্থাপত্য শিল্প, ভাস্কর্য, অঙ্কন, অলঙ্কার, চিত্র ও চিত্রাঙ্কন, নকশা শিল্প, চিত্রকলা, আলোক চিত্র, সঙ্গীত শাস্ত্র, আমোদ-প্রমোদ, কবিতা, গল্প, ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সকল ধরনের ইতিহাস, ইতিহাস, ভ্রমণকাহীনি, সাধারন জীবনী ও প্রাচীন ইতিহাসসহ  বিভিন্ন রকমের ৪২ হাজার বই।

এতো আয়োজনের পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জ্ঞাণী-গুণীদের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত কুমিল্লার সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে ক্রমশই কমছে পাঠক সংখ্যা। ইতোমধ্যে কয়েকশ বছরের পুরোন বইও নষ্ট হওয়ার পথে। এসব অপ্রতুল বইকে সংরক্ষণ করার জন্য নেই তেমন কোন ব্যবস্থা।

ইতিহাস সৃমিদ্ধ পাঠাগারটি কুমিল্লা মহানগরীর ছোটরা কলোনীতে অবস্থিত (আদালত গেইট থেকে ২০০মিটার উত্তরে)। প্রাচীন এ পাঠাগারটি ১৯৮২ সালে অর্থাৎ কুমিল্লা-চাঁদপুর- ব্রাক্ষণবাড়িয়া মহকুমা জেলায় রূপান্তরের ২ বছর পূর্ব থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন হয়ে আসছে।

বিশিষ্টজনরা জানান, একসময় এ পাঠাগারটি ছিল পাঠকে ভরপুর। বইপ্রেমী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাহিত্যিক, আইনজীবী, গবেষক, লেখকদের প্রিয় ঠিকানা ছিল সরকারি এ গ্রন্থাগ্রারটি। সময়ের বিবর্তনে, নগরীর রূপরেখার পরিবর্তনে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রচার বিমুখতার কারণে নতুন প্রজন্মের অনেক পাঠক ও শিক্ষার্থীরাই জনেনা বই সমৃদ্ধ সরকারি এ গ্রন্থাগ্রারের কথা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের গণিত চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন বলেন,  কুমিল্লায় এত সুন্দর মনরোম পরিবেশে একটি সরকারি পাঠাগার আছে, তা অনেকেই জানেনা। অনেক শিক্ষার্থী সময়মত পাঠ্যবই কিনতে না পারায় পড়ালেখায় বেশ অসুবিধা হয়। যার ফলে অনেক সময় কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হয় না। গ্রন্থাগারটিকে শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচিত করতে পারলে শিক্ষার্থীদের বেশ উপকার হতো। একজন্য শহরের কলেজ গুলোতে হ্যান্ডবিল ও পচারণামূলক কর্মসূচী নেওয়ার আবেদন জানান।

সদ্য এসএসসি পাশ করা রাছেল, রায়হান, জাবেদ, সাগর সূত্রধর জানান, পাঠাগারটি অনেক সুন্দর ও নিরিবিলি। এখানে অনেক ভালো ভালো বই পাওয়া যায়। চারপাশের পরিবেশটাও অনেক শান্ত। তাই সময় পেলে চলে আসি।  সাগর বলে, তাই আগে নিজে একা এসেছিলাম আজ বন্ধুদের নিয়ে আসি।

বিশিষ্ট লেখক এম এ আজিজ বলেন, দিন দিন বই পড়ার প্রবণতা কম দেখা যায়। ফেসবুক ও তথ্য প্রযুক্তির কারনে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হচ্ছে। তাই সরকারের পাশাপাশি  বেসরকারি সংস্থা বা সংগঠন গুলোকেও উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু এটি বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের একমাত্র সরকারি গ্রন্থাগার এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক পরিচালিত। তাই এর কর্তৃপক্ষকে পাঠক বৃদ্ধি করার জন্য অবশ্যই পচারণা ও প্রতিযোগিতামূলক অন্ষ্ঠুান আয়োজন করা যেতে পারে।  

এ ব্যাপারে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান মো. কামরুল হাসান বলেন, প্রচারের জন্য আমারা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকি। ইতোমধ্যে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে বিলবোর্ড লাগানো হবে।

তাছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে রচনা, আবৃত্তি, সুন্দর হাতের লেখা  প্রতিযোগিতা, বই পাঠ প্রতিযোগিতা ও বই প্রর্দশনীর আয়োজন করা হয়।  তিনি আরো বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজ ও মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে আমরা বিভিন্ন প্রদক্ষেপ হাতে নিয়েছি।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Link copied!