পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিভাবক প্রবেশ করালো জবি শিক্ষক!

  • জবি প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭, ১০:২৪ পিএম
পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিভাবক প্রবেশ করালো জবি শিক্ষক!

জবি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্রে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল মোমেনের বিরুদ্ধে দুবার অভিভাবক প্রবেশ করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জবি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। জবি কেন্দ্রে প্রবেশ করা ওই অভিভাবকরা সহকারী অধ্যাপক আবদুল মোমেনের আত্মীয়।

এতে বাধা দেয়ায় জবির সহকারী প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামালকে ‘দেখে নেয়ার’ হুমকিও দিয়েছেন ওই প্রভাবশালী শিক্ষক। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে বেশ হট্টগোলের খবর পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, জবিসহ সকল পরীক্ষা কেন্দ্রের বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টম্বর) সন্ধ্যার পর পর নিরাপত্তার স্বার্থে অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া প্রবেশ করা নিয়ে বাধ্যবাধকতা দেয় কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টম্বর) সকাল ১০টার পর বহিরাগত প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দেয় জবি কর্তৃপক্ষ। দুপুর ১২টা থেকেই ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফটকে পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা অবস্থান নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পরপরই জবির ভর্তি পরীক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে শুরু করেন। দুপুর ১২টার পরপরই জবি ক্যাম্পাসের আশপাশে ভর্তি পরীক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা অবস্থান নেয়।

তবে কিছু অভিভাবক জবির ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাধা দেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। এ সময় জবির ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল মোমেন প্রধান ফটক থেকে তার গ্রামের এলাকার পুলিশের এক (ওসি) কর্মকর্তার মেয়েকে নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চান।

তখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা আবদুল মোমেনকে বাধা দেন,  যেন তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিভাবকসহ প্রবেশ না করেন। বাধা উপেক্ষা করেই ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়ে আবদুল মোমেন পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন।

পরে দুপুর ২টার দিকে পুনরায় পরীক্ষা কেন্দ্রে আবদুল মোমেন তার শ্বাশুড়ি ও তার শ্যালিকা ভর্তি পরীক্ষার্থীসহ চার জনকে নিয়ে কেন্দ্র প্রবেশ করতে চান। তখনই সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল তাদের বাধা দেন। এতে বেশ চটে যান আবদুল মোমেন। তিনি মোম্তফা কামালকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন।

এ সময় আরো দুজন সহকারী প্রক্টর ড. মাহফুজ, জাফর ইকবাল ও নাজমুর নাহার আর্জু উপস্থিত ছিলেন। তারাও আবদুল মোমেনেকে পরীক্ষার্থীর অভিভাবক প্রবেশে বাধার পক্ষে কথা বলেন। পরে সহকারী প্রক্টরবৃন্দ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুল মোমেন সোনালীনিউজকে দুজন অভিভাবক প্রবেশের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ডরমেটরিতে থাকি। আমার আত্মীয়রা আসতেই পারে।

পরীক্ষা চলাকালীন সময় ও তার আগের দিন থেকে জবিতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এবং পরীক্ষার কাছে প্রত্যোক অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারে না এমন অবস্থায় আপনি দুজন অভিভাবকে প্রবেশ করানো কি বিধি সম্মত? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি শিক্ষক, আমিও চাই জবির নিরাপত্তা। আমি প্রক্টর স্যারকে জানিয়ে আমার আত্মীয়দের প্রবেশ করিয়েছি।

তবে হুমকি দেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি আরো বলেন, প্রক্টর স্যার থাকতে সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামালতো আমাকে বাধা দিতে পারে না।

জানতে চাইলে দুটি ঘটনার সময় উপস্থিত সহকারী প্রক্ট ড. মাহফুজ সাংবাদিকদের বলেন, একজন আত্মীয় আসতেই পারে। কিন্তু আমরা আশ্চর্য হলাম, মোমেন স্যার দুই দফায় তার আত্মীয়কে কিভাবে কোন আইনে ভর্তি পরীক্ষার মত সময়ে দুই দফায় চারজন অভিভাবককে কেন্দ্রে প্রবেশ করান?

জবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. নাসির উদ্দন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, সব তো জানেন? আমি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হুমকি স্বীকার হয়েছি। মোমেন স্যারকে কেন পরীক্ষা কেন্দ্রে অভিভাবক প্রবেশে বাধা দিলাম এটাই আমার অপরাধ? আমি রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) ক্যাম্পাসে খোলার পর উপাচার্য স্যারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেব। আমরা প্রক্টরিয়াল বডি ভিসি স্যার ও ট্রেজারার স্যারকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সন্ধ্যায় জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান সোনালীনিউজকে বলেন, রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের ডেকে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা নেব।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত জবির বাণিজ্য অনুষদের ‘সি’ ইউনিটের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Link copied!