মহানায়কের প্রস্থানের ৪১ বছর

  • বিনোদন ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম
মহানায়কের প্রস্থানের ৪১ বছর

ছবি : মহানায়ক উত্তম কুমার

ঢাকা : এখনও টেলিভিশনে পর্দায় সুর বাঁধে ‘হারানো সুর’। ‘নায়ক’-এর অভিনয় দেখে সম্ভ্রম জাগে। উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর চার দশক পার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাঙালি ভুলতে পারেনি তাকে। এখনও বাঙালির কাছে সেরা অভিনেতা তিনিই। ২০২১ সালের ২৪ জুলাই তার মৃত্যুর ৪১ বছর পূর্ণ হল। আমরা আরও একবার নজররাখল তার জীবনের গভীরে।

১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বাংলার বুকে জন্ম হল এক নক্ষত্রের। প্রথম জীবনে সংসারে প্রবল অনটনের মধ্যে বড় হয়েছিলেন তিনি। তাই পড়াশোনা শেষ করার আগেই উপার্জনের রাস্তায় পা বাড়াতে হয়েছিল তাকে। ইন্ডাস্ট্রি তখনও পায়নি মহানায়ককে। সংসারের প্রয়োজনে তিনি তখন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে কেরানির চাকরি করেন। কেরানির কাজের মধ্যেই আহিরীটোলায় নিজেদের থিয়েটার গ্রুপ ‘সুহৃদ সমাজ’-এ নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন উত্তম কুমার।

থিয়েটার করতে করতেই স্টুডিয়োপাড়ায় এল ডাক। ১৯৪৮ সালের ‘দৃষ্টিদান’ তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র। কিন্তু শিকে ছিঁড়ল না একেবারেই। বরং তকমা জুটল ‘ফ্লপ মাস্টার’-এর। যুগলবন্দি ঘরানার অন্যতম উদাহরণ সত্যজিৎ রায় এবং উত্তমকুমার। উত্তমকুমারকে ভেবেই ১৯৬৬ সালে ‘নায়ক’ ছবি করার কথা ভেবেছিলেন সত্যজিৎ রায়। ‘নায়ক’ উত্তমের কেরিয়ারের ১১০তম ছবি।

হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর ‘নায়ক’ দেখার পর রীতিমতো উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন। উত্তমের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন তিনি। এলিজাবেথ মুগ্ধ হয়েছিলেন উত্তমের অভিনয়ে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত মোট ২১২টি ছবি করেছেন তিনি। তার সবকটি ছবিই ভারতীয়, বিশেষ করে বাংলা সিনেমার অলঙ্কার।

১৯৭৬ সাল যখন ভারতে জরুরি অবস্থা চলছে তখন মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে ‘দেবী দুর্গতিহারিণীম’ নাম দিয়ে এক বিকল্প অনুষ্ঠান হয়েছিল। রেডিয়োতে সেই অনুষ্ঠান করেছিলেন উত্তম। তবে পর্দায় উত্তম বাঙালির হৃদয়ে বাস করলেও এই ভূমিকায় তাকে মেনে নেয়নি জনতা। উত্তমও সরে দাঁড়িয়েছিলেন বিনয়ের সঙ্গে।

অভিনয় ছাড়াও পরবর্তীতে প্রযোজক, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও কাজ করেছেন উত্তম। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ও ‘চিড়িয়াখানা’য় অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দু’টি ছোট গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন উত্তম। একটি সুবোধ ঘোষ এবং অন্যটি তরুণ রায়ের লেখা গল্প অবলম্বনে।

সকলের কাছে মহানায়ক আবার বাড়ির ছোটদের কাছে ছিলেন ‘ভাল কাকু’। উত্তম মানে ভাল। সেই থেকেই ভাইপো-ভাইঝিরা তাকে ওই নামে ডাকতেন। এই ভাল কাকু আবার গিরীশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে এলে গাড়ির দরজা খুলে দিতেন পাড়ার মুচি। গাড়ি থেকে নেমেই টাকা দিয়ে রোজ তাকে খুশি করতেন মহানায়ক।

উত্তম কুমারের কতোটা জনপ্রিয়তা ছিল তা আজকের দিনে বসে কল্পনা করা যাবে না। বিশেষ করে পত্রিকা অফিসে প্রতিদিন হাজার হাজার চিঠি আর শত শত ফোন আসতো উত্তম কুমারের সাথে শুধু একবার কথা বলিয়ে দেয়ার জন্য। একটাবার যেন তাদের চিঠির উত্তর দেন উত্তম কুমার। জন্মদিনে চিঠির সংখ্যা কোনো কোনো বছর লাখ খানেকও হতো।

উত্তম কুমারের মৃত্যুর পর এক নারী পত্রিকা অফিসে উত্তম কুমারকে নিয়ে এক চিঠিতে লিখেছিলেন ‘উত্তমের মৃত্যুতে আমি বিধবা হলাম।’ উত্তমকুমারের চলচ্চিত্রের তালিকায় চোখ বুলালে আরেকটা ব্যাপার মনে হয়, কতো বিচিত্র ভূমিকায় তিনি অভিনয় করেছেন। আবার সময়ের সঙ্গে দারুণভাবে পাল্টেও নিয়েছেন তিনি নিজেকে। শেষদিকে নায়কের ভূমিকা ছেড়ে অভিনয় করেছেন অসামান্য সব চরিত্রে।

উত্তম কুমার যে কতোটা বিনয়ী তা অবর্ণনীয়। একজন প্রধান চরিত্রের অভিনয় শিল্পী থেকে প্রোডাকশন বয়ের সঙ্গেও তার দারুণ সম্পর্ক ছিলো। যা আজকের দিনে মাঝেমাঝে কল্পনাও করা যায়না। সমাজ সচেতন, চিন্তাশীল, অথচ প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন তিনি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত চলচ্চিত্র প্রাণ। উত্তম কুমারের আত্মজীবনী ‘আমার আমি’ পড়লে বোঝা যায় চলচ্চিত্রের প্রতি কতোটা ত্যাগী ও আত্মপ্রাণ ছিলেন। আত্মজীবনীতে উত্তম কুমার লিখেছিলেন, ‘চলচ্চিত্র আমাকে এতোটা দিয়েছে, আমি দিবো না চলচ্চিত্র শিল্পকে।’ বাংলা চলচ্চিত্রে যদি কোনো ব্যক্তির আর্থিক ও সামগ্রিকভাবে অবদানের কথা আসে তবে তিনি নিঃসন্দেহে উত্তম কুমারই হবেন। তাইতো তিনি মহানায়ক। একই সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্রের, আবার জীবনেরও। মহানায়ক উত্তম কুমারের চলে যাওয়ার দিন আজ। 

‘ওগো বধু সুন্দরী’ ছবির শ্যুটিং চলাকালীনই মহানায়কের স্ট্রোক হয়। বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসকদের প্রাণপণ চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই রাতে তার মৃত্যু হয়।

সুত্র : আনন্দ বাজার
সোনালীনিউজ/এসএন

Link copied!