নায়ক- নায়িকা দ্বন্দ্ব, ছবি নির্মাণ বন্ধ!

  • বিনোদন প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০১৮, ০৩:৩৫ পিএম
নায়ক- নায়িকা দ্বন্দ্ব, ছবি নির্মাণ বন্ধ!

ঢাকা: বাপ্পী ছবি করবেন না মাহির সঙ্গে। মাহির সঙ্গে টানা কাজ করছেন সাইমন। অন্যদিকে বাপ্পীর হয়েছে নায়িকা সংকট, নতুন নায়িকা নিয়েই চালাচ্ছেন। শাকিব খানের বিপরীতে চুক্তিবদ্ধ হয়েও একের পর এক নায়িকা বাদ পড়ছেন।

নির্মাতারা যেন শাকিবের পছন্দের নায়িকা ছাড়া তাকে নিয়ে কোন গল্পই ভাবতে পারেন না। বিদ্যা সিনহা মিম, মিষ্টি জান্নাত, রাহা তানহা খান কিংবা তানহা মৌমাছি- একের পর এক শাকিবের সিনেমা থেকে বাদ পড়ছেন।

আরিফিন শুভরও আছে নায়িকার ক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দ। মাঝখানে নির্মাতারা পড়ছেন বিপদে। তাদের পছন্দ মেলাতে শুটিংই শুরু করতে পারছেন না।

একটু পেছনে তাকানো যায়। ২০১৪ সাল। শাহাদাৎ হোসেন লিটনের পরিচালনায় ‘লাভ স্টেশন’-এ জুটি বাঁধলেন বাপ্পী চৌধুরী ও নবাগত মিষ্টি জান্নাত। শুটিং করতে গিয়ে বেশ সখ্যতা হয়ে গেল।

আপনি থেকে তুমি, তুমি থেকে তুইতো নামতে খুব বেশি সময় নেননি তাঁরা। ছবিটি মোটামুটি ব্যবসা করলে নির্মাতারা তাঁদের নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেন।

কিন্তু হুট করে কি এমন হলো, একসঙ্গে আর ছবি করতে চাইলেন না। জান্নাত প্রযোজিত ‘তুই আমার’-এ বাপ্পীর অভিনয় করার কথা থাকলেও করলেন সাইমন। এই ছবি মুক্তির সময়ও বাধলো আরেক ঝামেলা।

সাইমনকে কোনোভাবেই ছবির প্রচারণায় আনতে পারলেন না প্রযোজক জান্নাত। শুধু তাই নয়, মুস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘জান্নাত’-এ সাইমনের বিপরীতে অভিনয় করার কথা ছিল জান্নাতের, করলেন মাহিয়া মাহি। ছবিটি মুক্তিও পেল।

এমনটা কেন হয়েছিলন। পরিস্কার করলেন নায়িকা জান্নাত। বললেন,‘সাইমনকে আমার ব্যাপারে হয়তো কেউ ভুল বুঝিয়েছে। ওর তরফ থেকেই ‘না’ আসছে। না হয় এতদিনে হয়তো আমাদের সুপারহিট একটি জুটি হত। যেটা সিনেমার জন্য দরকার ছিল।’

এর প্রমানও অবশ্য পাওয়া গেছে। পরিচালক মিনহাজ অভি তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘মন পবনের নাও’-এর জন্য সাইমন আর মিষ্টি জান্নাতকে জুটি করার সিদ্ধান্ত নিলেন।

জান্নাত তাতে রাজিও ছিলেন। কিন্তু সাইমন ‘না’ করে দিলেন। এর কারণ অবশ্য সাইমন জানিয়েছেন, মাহির সঙ্গে দর্শক গ্রহন করছে। এই মুহূর্তে জুটি ভাঙতে চাচ্ছি না।’

ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে সবচেয়ে বেশি ছবি বাদ দিয়েছেন শাকিব খান। অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে একসময় শাবনূর-পূর্ণিমা-পপি- সাহারা- বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে একের পর এক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।

সেই অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করছেন তিনি। ‘বসগিরি’,‘রংবাজ’,‘শ্যুটার’ ও ‘অহংকার’- চারটি ছবিতেই রাতারাতি অপুর বদলে নায়িকা বনে যান শবনম বুবলি। এমনকি অপুর সঙ্গে জুটি হওয়া ‘মাই ডার্লিং’ , ‘লাভ ২০১৪’ ও ‘মা’ ছবিগুলোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

শাকিব-অপু-বুবলি দ্বন্দ্বের পরও থেমে নেই রেষারেষি। শাপলা মিডিয়ার দুটি ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন মিম। ‘আমি নেতা হব’ মুক্তি পাওয়ার মিমের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শবনম বুবলি।

এই প্রযোজনা সংস্থার আরো কয়েকটি ছবিতে শাকিবের বিপরীতে চুক্তিবদ্ধ হন মিষ্টি জান্নাত, তানহা মৌমাছি ও রাহা তানহা খান। তবে তাদের কেউই শাকিবের নায়িকা হতে পারছেন না যে, তা আপাতত নিশ্চিত হয়ে বলা যায়।

শাকিবের এমন সিদ্ধান্তের শিকার হয়েছেন অনেক নবাগত নায়িকাও। ২০১৬ সালে বদিউল আলম খোকন একটি ছবিতে শাকিবের বিপরীতে চুক্তিবদ্ধ করেছিলেন নবাগত ছোঁয়াকে।

শাকিবের শিডিউল নেওয়ার পর সংগীত পরিচালক, নৃত্য পরিচালক, ফাইট ডিরেক্টরসহ সকল কলাকুশলীকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু শুটিংয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে খোকনকে শাকিব জানান, ছবিটি তিনি করছেন না। শেষমেশ ছবিটিই আর হয়নি। খোকন অনেক চেষ্টা করেও ছবিটি করতে পারেননি। এই ছবির কারণেই শাকিব-খোকন জুটির দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব নষ্ট।

অভিযোগ আছে মাহিয়া মাহির বিপক্ষেও। সেই অভিযোগ তুলেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। যার ছবি দিয়ে মাহির সিনেমায় প্রবেশ। ‘ফালতু’ ছবিতে চুক্তিবদ্ধ করেন মাহিকে।

তাঁর বিপরীতে নেওয়া হয় মোশাররফ করিমকে। মাঝপথে এসে ছবিটি করবেন না বলে পরিচালককে জানিয়ে দেন মাহি। কারণ কিছুই জানাননি। শুধু পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

প্রথম ছবির নায়ক বাপ্পীর সঙ্গেও এখন অভিনয় করতে চান না মাহি। একটা সময় জাজ মাল্টিমিডিয়া ঘোষণা দিয়েছিল ‘পোড়ামন’ নায়ক সাইমনের সঙ্গে আর অভিনয় করবেন না মাহি। এখন মাহির হাতে থাকা বেশির ভাগ ছবির নায়কই সাইমন।

রেষারেষির তালিকা থেকে বাদ পড়েননি আরিফিন শুভও। তাঁর কারণে নাকি সিনিয়র অনেক পরিচালকের ছবি আটকে আছে। সে খবর জানালেন পরিচালক উত্তম আকাশ,‘ শুভর সঙ্গে বৈঠক করলাম ধানমণ্ডির এক রেস্টুরেন্টে।
 
গল্প শুনল, সম্মতিও দিল। পরে শুনি কাজটি করতে আগ্রহী নয়। ছবিটি থেকে আমাকে বাদ দিয়ে অন্য পরিচালককে চায়। নায়িকাও নিতে হবে তার পছন্দমতো। এটা কেমন কথা! আমিই প্রযোজক জোগাড় করলাম অথচ আমাকেই বাদ! প্রযোজক ফিরে গেলেন। শুভর জন্য ছবিটা আর হলো না।

ছবির নির্মাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাতে কার কি আসে যায়! ব্যক্তি রেষারেষির কারণে আটকে যাচ্ছে একের পর এক ছবি। অথচ একটা সময়ে দেখা গেছে কত মাল্টিস্টার সিনেমা।

রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, উজ্জল, ফারুক, জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্নারা একের অধিক স্টার থাকা সিনেমায় কত কাজ করেছেন। কারো চেয়ে কেউ কম নয়।

নিজের চরিত্রে হয়েছেন প্রশংসিত। অথচ এখন কে কার সঙ্গে অভিনয় করবে সেটা নিয়েও ঝামেলা। খুব শিগগির যদি এই অবস্থার অবসান না হয়। ছবি নির্মাণ আরও কমে যাবে। একই মুখ বারবার পর্দায় দেখতে হবে। একজনের জন্য আরেকজনকে হজম করতে হবে। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার


সোনালীনিউজ/বিএইচ

Link copied!