উচ্চশিক্ষিত সন্তানের বাবারা বৃদ্ধাশ্রমে যেমন আছেন

  • সাতক্ষীরা প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২০, ০৪:৫৬ পিএম
উচ্চশিক্ষিত সন্তানের বাবারা বৃদ্ধাশ্রমে যেমন আছেন

সাতক্ষীরা: বাবা দিবস আজ। বিশেষ এই দিনে মন ভালো নেই সাতক্ষীরার বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বাবাদের। সন্তানরা উচ্চশিক্ষিত, কেউ আইনজীবী আবার কেউ বড় চাকরি করেন। তবে তারা কেউই খবর রাখেন না বাবার।

সাতক্ষীরা শহরের উত্তরকাটিয়া এলাকায় বেসরকারি সংস্থা আরা পরিচালিত একটি বৃদ্ধাশ্রম ‘প্রবীন আবাসন কেন্দ্র’। এখানে বসবাস করছেন ১৮ জন বৃদ্ধ। তাদেরও রয়েছে পরিবার, ছেলে ও মেয়ে। তবে সন্তানরা এখন খোঁজ নেন না আর।

বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার সোনাকান্ত গজালিয়া গ্রামের মৃত শেখ রহমত আলীর ছেলে জাবেদ আলী (৬০)। এখন এই বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা। গত চার বছর ধরে এই বৃদ্ধাশ্রমেই বসতি এই বাবার। দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা ঢাকাতে বসবাস করেন। মেয়ে থাকেন স্বামীর সঙ্গে। কষ্টের যেন শেষ নেই এই বাবার।

জাবেদ আলী বলেন, চার বছর ধরে এখানেই বসবাস করছি। ছেলে-মেয়েরা কেউ খোঁজ খবরও নেয় না। ছেলেরা ঢাকাতে থাকে। সেখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের বাড়িতে আমার জায়গা হয়নি। ছেলে-বউমা বলেছিল, আপনি বেশি বোঝেন। এই বাড়িতে এত বেশি কথা বলা যাবে না। এরপর থেকেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একজনের মারফত এই বৃদ্ধাশ্রমে এসে পড়ি চার বছর আগে।

তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা জানে আমি এখানে রয়েছি। তবে কেউ কখনো দেখতেও আসেনি কেমন আছি। বাবা দিবস প্রতিবছরই আসে। তবে বাবার খবর আমার সন্তানরা রাখে না।

শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার মৃত আলেক গাজীর ছেলে আলী হোসেন (৬২)। এক বছর ধরে রয়েছেন এই বৃদ্ধাশ্রমে। তিন ছেলে ও এক মেয়ে তার। ছেলেরা বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর বাসিন্দা হয়েছেন এই বৃদ্ধাশ্রমের।

আলী হোসেন জানান, স্ত্রী বাড়িতে থাকে। তাকেও দেখতে মন চাই। তবে দেখতে পারি না। সন্তানরা কেউ দেখতে পারে না আমাকে। বয়স হয়ে গেছে এখন আমি খারাপ মানুষ হয়ে গেছি।

জেলার দেবহাটা উপজেলার অস্কারপুর গ্রামের বিলাত আলীর ছেলে জামাত আলী (৬২)। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তবে সন্তানরা কেউই খবর রাখে না তার। সন্তানদের জন্য মনটা খারাপ বলে জানান এই বাবা।

বৃদ্ধাশ্রমেরই আরেক বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় সরকারিভাবে কোনো বৃদ্ধাশ্রম নেই। বেসরকারি সংস্থা আরা এটি চালাচ্ছে। এছাড়া কিছু মানবিক মানুষ বিভিন্ন সময় সহযোগিতা দেয় সেগুলো দিয়েই এখানকার বাসিন্দাদের আহারের ব্যবস্থা করা হয়। জায়গাটি ভাড়া নেয়া। সরকারি একটি জায়গায় যদি বৃদ্ধাশ্রমটি স্থায়ীভাবে করা হয় তবে অনেক অসহায় বাবা শেষ জীবনটা নিশ্চিন্তে কাটাতে পারবেন।

সাতক্ষীরা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক দেবাশীষ সরদার বলেন, বৃদ্ধাশ্রমটি রয়েছে জানি। সেখানে খোঁজ-খবর নেয়া ছাড়া আমাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ থাকে না। তাদের দাবির বিষয়টি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে উপস্থাপন করা হবে।

সোনালীনিউজ/এইচএন

Link copied!