মৃৎশিল্পের কারিগররা পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে

  • চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১, ০৩:৩৯ পিএম
মৃৎশিল্পের কারিগররা পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে

ঢাকা : পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পাবনার চাটমোহরে মৃৎশিল্পের কারিগররা। মাটির পাত্রের চাহিদা আর আগের মতো নেই। নামকাওয়ান্তে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা আছে। কিন্তু টিকে থাকার মতো বাজার দর নেই। তার উপর করোনার প্রভাব। মাটিসহ কাঁচামালের দুস্প্রাপ্যতা, দাম চড়া অবস্থাকে আরো কঠিন করে দিয়েছে। তাই বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে আর সংসার চালতে হিমশিম খাচ্ছেন পাবনার চাটমোহরের মৃৎশিল্পের কারিগররা। সংসার চালানো খরচের দম ধরে রাখতে পারায় কুমার খ্যাত পেশাটাই ছাড়ছেন তাদের অনেকে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এই তথ্য।

মৃৎপণ্যের জায়গাটা প্লাস্টিক, মেলামাইন ও অ্যালুমেনিয়ামের পণ্য দখল করায় ঐতিহ্যবাহি শিল্পটির আজ এই দশা। আরেকটি কারণ-সরকারি সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও করোনার প্রভাব। স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পেলে এই শিল্পের এখনো টিকে থাকার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন পেশা সংশ্লিষ্টরা।

পেশাটির সঙ্গে জড়িত অমূল্য পাল, নারায়ন পাল, মহিতোষ পালসহ অন্যরা বলছেন, মৃৎ পণ্য তৈরিতে বিশেষত দরকার হয়- এঁটেল মাটি, বালি, রঙ, জ্বালানি (কাঠ, শুকনো ঘাস ও খড়)। এখন এসব পণ্যের দাম বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ। মাটি সব সময় পাওয়া যায় না। দুর-দুরান্ত থেকে আনতে খরচ বাড়ে। কিন্তু তৈরি পণ্য বিক্রিকালে যে দাম চাওয়া হয়, সেই দামে কিনতে চায় না ক্রেতা। চাহিদা মতো দামে পণ্য কিনলে লাভটা মোটামুটি হয়। কিন্তু বেশি দর-দামে কমতে থাকে লাভের পরিমাণ। লাভটা খুব বেশি ধরে দাম হাকা হয় না। তাদের আক্ষেপ-আর্থিক সঙ্কটে দিন পার করলেও সরকারিভাবে সহযোগিতা তেমনটা পাওয়া যায় না। বছরের বর্ষা মৌসুুমটায় ঘরে হানা দেয় দারিদ্র। তখন বেচা-কেনা কম হয়। তার উপর এবারের করোনার প্রভাবে সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে।

এই শিল্পের অতীতটা বলতে গিয়ে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এক সময় তো মাটির তৈরি জিনিসপত্রে বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হতো। সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে মাটির পণ্য বোঝাই ‘ভার’ নিয়ে গ্রাম ও মহল্লায় গাওয়াল করতেন কুমাররা। ভারে থাকতো-পাতিল, গামলা, দুধের পাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির পণ্য সড়া, চাড়ি (গরুর খাবার পাত্র), ধান-চাল রাখার ছোট-বড় পাত্র, কড়াই, মাটির ব্যাংক, শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল, খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখিসহ নানান পণ্য। ধান বা খাদ্যশস্য, টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন সেসব পণ্য। সন্ধ্যায় ধান বোঝাই ভার নিয়ে ফিরতেন বাড়ি। ওই ধান বিক্রি করে চলতো তাদের সংসার খরচ।

অতীতের মতো অবস্থা এখন না থাকলেও এই পেশা জড়িতদের আশা-হয়তো কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে মাটির পণ্যের। তখন হয়তো পরিবারে ফিরবে স্বচ্ছলতা। এখন মানবেতর দিনানিপাত করলেও সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও সকাল-সন্ধ্যা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তারা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!