ফাইল ছবি
দেশে প্রথমবারের মতো শিশুদের বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের উদ্যোগ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম নয়-এর আগে পাকিস্তান ও নেপালে শিশুদের এ টিকা দেওয়া হয়েছে। নেপালে ২০ হাজার শিশুর ওপর চালানো এক গবেষণায় টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে, যা প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ।
২০২১ সালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়, টিকাটি প্রথম বছরে ৮১ শতাংশ এবং দ্বিতীয় বছরে ৭৯ শতাংশ কার্যকর। ‘টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন’ বা টিসিভি ৯ মাস বয়সী শিশু থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত সবার জন্য নিরাপদ। টিকা নেওয়ার পর সামান্য জ্বর বা ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা ছাড়া বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
টাইফয়েড একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং মারা যান প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার। আক্রান্তদের বড় অংশই শিশু ও কিশোর।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, ২০২১ সালে দেশে ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে মারা যায় ৮ হাজার। নিহতদের ৬৮ শতাংশই শিশু। দেশে এ রোগের ধারাবাহিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, সংক্রমণ বাড়ছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেপালের পাটান অ্যাকাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেস যৌথভাবে নেপালের ললিতপুর শহরে এই গবেষণা চালায়। এতে ৯ মাস থেকে ১৬ বছর বয়সী ২০ হাজারের বেশি শিশুকে দুটি দলে ভাগ করা হয়। এক দলকে ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনালের তৈরি টিসিভি টিকা দেওয়া হয়, অন্য দলকে দেওয়া হয় মেনিনজাইটিস এ টিকা।
প্রায় এক বছর ধরে শিশুদের স্বাস্থ্যের ওপর নজর রেখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, টিসিভি টিকা পাওয়া দলের মধ্যে মাত্র ৭ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, যেখানে অন্য দলে আক্রান্ত হয় ৩৪ জন। বিশ্লেষণে দেখা যায়, টিকার কার্যকারিতা ৭৯ শতাংশ।
গবেষণায় আরও বলা হয়, টিসিভি টিকা নেওয়া শিশুদের মধ্যে ৯ শতাংশের সামান্য জ্বর দেখা যায়, এছাড়া ইনজেকশনের জায়গায় হালকা ব্যথা, ফোলাভাব বা লালচে হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তবে এগুলো দ্রুত সেরে যায়।
গবেষণার ফলাফল বিবেচনায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টাইফয়েড-প্রবণ দেশগুলোকে তাদের জাতীয় টিকাদান কর্মসূচিতে টিসিভি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট টাইফয়েডের হুমকি বাড়ছে। তাই এই টিকা শুধু শিশুদের জীবন রক্ষায় নয়, ভবিষ্যতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণেও বড় ভূমিকা রাখবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিনের অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার কমাতে নতুন অধ্যায় রচনা করবে। টিকাদান কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন হলে দেশে টাইফয়েডের প্রকোপ নাটকীয়ভাবে কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :