বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

বাংলাদেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৫, ০৯:৫১ এএম
বাংলাদেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস এখন নীরব মহামারির রূপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের সর্বশেষ তথ্য বলছে—ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যায় বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সপ্তম স্থানে। দেশে ১ কোটি ৩৮ লাখ মানুষ এই রোগে ভুগছেন, যাদের প্রায় অর্ধেক নারী।

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগী বাড়লেও চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। সরকারি মেডিকেল কলেজের বাইরে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে এখনও ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের কোনো পদ নেই। দেশে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট রয়েছেন মাত্র ৩৫০ জন, প্রতি বছর যোগ হয় আরও ২০–৩০ জন চিকিৎসক। ফলে বিশাল রোগীসম্ভার সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্টদের মতে, দেশের ৯০ শতাংশের বেশি রোগী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন। সময়মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে না আনলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, অন্ধত্ব ও অঙ্গচ্ছেদের ঝুঁকি কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এমএ হালিম খানের তথ্য অনুযায়ী—

  • স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে দ্বিগুণ
  • কিডনি বিকলের ঝুঁকি ৫ গুণ
  • গ্যাংগ্রিনের ফলে পা কেটে ফেলার ঝুঁকি ২০ গুণ
  • রেটিনা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি ২৫ গুণ পর্যন্ত

জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে রোগীদের বিশাল একটি অংশ ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গাইনি বিশেষজ্ঞদের তথ্য বলছে, দেশে প্রতি চারজন গর্ভবতী নারীর একজন গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এক দশক আগেও এই হার ছিল ১০ শতাংশ, বর্তমানে তা ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। এসব নারীদের ৬৫ শতাংশ পরবর্তীতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দিনের বড় অংশ কর্মস্থলে কাটানোর কারণে সেখানেই ডায়াবেটিস সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, মানসিক চাপ এবং কম শারীরিক পরিশ্রম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়ায়। এর ফলে রোগীর ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি জাতীয় উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মতে, রোগটি জটিল অবস্থায় পৌঁছালে চিকিৎসা ব্যয় চারগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়।

প্রি-ডায়াবেটিস পর্যায়ে মোট চিকিৎসা খরচ থাকে প্রায় ২০% আর জটিল পর্যায়ে পৌঁছালে খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ৮০% পর্যন্ত।

যদিও দেশে ১,৩০০টির বেশি উপজেলা পর্যায়ের এনসিডি কর্নারে বিনামূল্যে দুটি ওষুধ দেওয়া হয়, তারপরও দেশে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ রোগী। যেসব এলাকায় নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত হয়, সেখানে নিয়ন্ত্রণ হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত উন্নত হয়েছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন—

  • ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার সীমিতকরণ
  • ধূমপান পরিহার
  • নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা
  • মানসিক চাপ কমানো
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ/ইনসুলিন গ্রহণ
  • সুষম জীবনযাপন বজায় রাখা

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আজ রাজধানীতে পোস্টার-লিফলেট বিতরণ, রোড শোসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। আগামীকাল বারডেম মিলনায়তনে রোগী-চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব হবে।
এছাড়া—

বারডেম ও সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে সকাল ৮টা–১১টা বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষ, হাসপাতালগুলোতে কম খরচে হার্ট ক্যাম্প এছাড়াও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির
আয়োজিত হয়েছে।

এম

Link copied!