ইউরোপে করোনার আরেকটি ‘ঝড়’ আসছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২১, ১১:৫১ এএম
ইউরোপে করোনার আরেকটি ‘ঝড়’ আসছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ঢাকা : করোনাভাইরাসের নতুন উদ্বেগজনক ধরন ওমিক্রন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকায় ইউরোপজুড়ে বিভিন্ন দেশ চলাফেরার ওপর নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে।

এদিকে ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি ইউরোপের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চরমসীমার দিকে ঠেলে দেবে বলে মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) সতর্ক করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপীয় অঞ্চলের প্রধান হ্যান্স ক্লুজ।

তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের আরেকটি ঝড় আসছে। এক্ষেত্রে সংক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির কারণে সরকারগুলোর প্রস্তুত হওয়া উচিত।

ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন দেশ আবার সামাজিক দূরত্বের বিধি জারি করছে। এতে বড়দিনের আগে দিয়ে মানুষের ভ্রমণ পরিকল্পনা এবং অর্থবাজার এক ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। আর এমন সময় ডব্লিউএইচওর ইউরোপীয় প্রধানের কাছ থেকে ওমিক্রন নিয়ে সতর্কতা এলো।

জার্মানি ক্রিসমাস-পরবর্তী নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ‘আমরা পরবর্তী ঢেউ, যেটি আমাদের ওপর আছড়ে পড়তে শুরু করেছে, সেটির ব্যাপারে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। আর তা করাও উচিত নয়।’

পর্তুগাল ২৬ ডিসেম্বর থেকে পানশালা ও নৈশক্লাব বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ক্রিসমাসের আগে ইংল্যান্ডে কোনো নতুন বিধিনিষেধ জারির বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন। তবে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ সামাজিক সম্মিলনের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে।

ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়াজুড়ে খুব দ্রুতই দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে ওমিক্রন সংক্রমণ। জাপানেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র। সেখানে একটি সামরিক ঘাঁটিতে একটিমাত্র গুচ্ছসংক্রমণ থেকে অন্তত ১৮০ জন ওমিক্রন আক্রান্ত হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের কোভিড-১৯ কর্মসূচি বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস হিপকিনস বলেছেন, তার দেশ আগামী বছর ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত সীমান্ত বন্ধ রাখবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ (সিডিসি) সোমবার হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, সেখানে গত এক সপ্তাহে কোভিড আক্রান্তদের ৭৩.২ শতাংশের দেহেই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।

ওমিক্রন ঠেকাতে সম্প্রতি কয়েকদিনে নানা পদক্ষেপ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি এবং আয়ারল্যান্ড। এর মধ্যে কোনও দেশ আংশিক কিংবা পূর্ণ লকডাউন দিয়েছে। আবার কোনও দেশ সামাজিক দূরত্ববিধি চালু রেখেছে।

থাইল্যান্ড মঙ্গলবার থেকেই বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করছে।

অস্ট্রেলিয়াতেও ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়েছে। তবে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দেশটিতে তুলনামূলক কম। তাই এখনই আবার লকডাউন না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্য নেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তিনি বলেন, আমরা লকডাউনে ফিরে যাব না, বরং ভাইরাসের সঙ্গেই মানিয়ে চলার পথে হাঁটব।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ওমিক্রন আতঙ্ক অর্থবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহামারিতে ভ্রমণ কমে যাওয়া ও ভেঙে পড়া সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির আবার ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে শঙ্কায় থাকা বিনিয়োগকারীদের কপালে নতুন করে ভাঁজ ফেলছে।

ডব্লিউএইচওর ইউরোপীয় অঞ্চলের ৫৩টি দেশের মধ্যে ৩৮টিতেই ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। এই দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া ও তুরস্কও আছে। ইউরোপের অনেক দেশে ওমিক্রন ধরন আধিপত্যশীল হয়ে উঠেছে।

ডব্লিউএইচওর ইউরোপীয় প্রধান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, আরেকটি ঝড় আসছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওমিক্রন এই অঞ্চলের আরও অনেক দেশে আধিপত্য বিস্তার করবে, যা ইতিমধ্যে চাপে থাকা স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে চরমসীমার দিকে ঠেলে দেবে।’ সূত্র : বিবিসি ও রয়টার্স

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!