ছবি: সংগৃহীত
আফগানিস্তানের ভারতঘেঁষা কূটনীতি এখন পাকিস্তানের জন্য নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর শুরুতে ইসলামাবাদকে ঘনিষ্ঠ মিত্র মনে করলেও এখন সেই সম্পর্কের ভেতর গভীর ফাটল দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘাত, কূটনৈতিক টানাপড়েন ও বাণিজ্যিক উত্তেজনা-সব মিলিয়ে কাবুল এখন পাকিস্তান থেকে সরে গিয়ে ভারতের দিকে ঝুঁকছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিবর্তন দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক ভূরাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে শুরু করে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আগমন পর্যন্ত আফগান রাজনীতিতে পাকিস্তানের প্রভাব ছিল স্পষ্ট। অন্যদিকে ভারত ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে—সালমা বাঁধ, পার্লামেন্ট ভবন, সড়ক ও হাসপাতাল নির্মাণে।
তালেবান শুরুতে ভারত বিষয়ে সতর্ক থাকলেও এখন ‘প্র্যাকটিক্যাল এনগেজমেন্ট’-এর পথে এগোচ্ছে। সম্প্রতি আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির ভারত সফরে নয়াদিল্লি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও শরণার্থী পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছে।
অন্যদিকে গত কয়েক মাসে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে তীব্র সংঘাত হয়েছে। ডুরান্ড লাইন নিয়ে দুই দেশের পুরোনো বিরোধ ফের রক্তক্ষয়ী রূপ নিয়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, আফগান ভূখণ্ড থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) হামলা চালাচ্ছে। কাবুলের দাবি, পাকিস্তানই তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করছে।
এই পারস্পরিক অভিযোগের মধ্যেই গত সপ্তাহে ভয়াবহ সংঘর্ষে আফগানিস্তান দাবি করেছে, পাকিস্তানের ৫৮ সেনা নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা ২০০-এর বেশি ‘ভারত-সমর্থিত টিটিপি’ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
তালেবান সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তান যদি আবারও আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে, তাহলে এর কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
এমন পরিস্থিতিতে কাবুল এখন পাকিস্তাননির্ভর বাণিজ্য রুটের বিকল্প খুঁজছে। ভারতের সহায়তায় ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করে সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্যের পরিকল্পনা করছে তালেবান সরকার। এতে পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে ভারত-আফগানিস্তান বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে।
ভারতের দৃষ্টিতে এটি এক কৌশলগত সুযোগ। আফগান জনগণের মধ্যে ভারতের ভাবমূর্তি তুলনামূলক ইতিবাচক, আর পাকিস্তান সেই জায়গা ক্রমেই হারাচ্ছে। তবে নারীর অধিকার ও মানবাধিকার ইস্যুতে তালেবানের প্রতি আন্তর্জাতিক অনাস্থা ভারতের জন্য বড় বাধা হতে পারে।
পাকিস্তানও হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারে চীনের সহযোগিতা নিতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: আল–জাজিরা, ইকোনমিক টাইমস, দ্য জিওপলিটিকস, উইকিপিডিয়া
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :