রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধের শান্তি সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন পরিকল্পনা দিয়েছে, তা গ্রহণে ইউক্রেনকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই সময়সীমা ঘোষণা ঘিরে ওয়াশিংটন–কিয়েভ–মস্কো— তিন পক্ষেই তীব্র কূটনৈতিক তাপ ছড়িয়েছে।
প্রস্তাবে একাধিক বিতর্কিত শর্ত থাকায় জেলেনস্কি বলেছেন, এটি গ্রহণ করলে “ইউক্রেন সম্মানহানির মুখে পড়বে”, আর না মানলে “যুক্তরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারকে হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।”
অন্যদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রস্তাবকে “আলোচনার ভিত্তি” হিসেবে দেখছেন এবং কিয়েভ অস্বীকৃতি জানালে রুশ বাহিনী আরও অগ্রসর হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ফক্স নিউজ রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, তার মতে ইউক্রেনের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় আগামী বৃহস্পতিবার। এর আগেই দু’টি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
পরে হোয়াইট হাউসে নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির সঙ্গে বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “জেলেনস্কিকে এটি পছন্দ করতেই হবে। তিনি না মানলে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না। শেষ পর্যন্ত তাকে কিছু না কিছু মেনে নিতেই হবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় রয়েছে— দনবাস অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া, এমনকি ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত কিছু অংশও মস্কোর শর্তে হস্তান্তর করা, রাশিয়ার দখলে থাকা কিছু অঞ্চল ফেরত দেওয়া, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সীমিত করে ৬ লাখে নামিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ নিষিদ্ধ করা।
এই শর্তগুলোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ ইঙ্গিত দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, “আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত পার করছি। ইউক্রেনের ওপর চাপ এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা আমাদের সম্মান ও স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আপস করব না। দুটি বিষয়ে আমি দিনরাত লড়বো—ইউক্রেনের মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্ব।”
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব চূড়ান্ত নয়, তবে এটি সমাধানের ‘একটি শক্ত ভিত্তি’ হতে পারে। তিনি কিয়েভকে সতর্ক করে বলেন, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে কুপিয়ানস্কে রাশিয়ার সাম্প্রতিক জয়ের মতো পরিস্থিতি যুদ্ধক্ষেত্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।
পুতিন আরও জানান, গত আগস্টে আলাস্কায় ট্রাম্পের সঙ্গে তার বৈঠকের আগেই ওয়াশিংটনের অনুরোধে মস্কো কিছু ছাড় দিয়েছে এবং প্রস্তাব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়।
কিয়েভ এখন কঠিন দোলাচলে— সম্মান ও ভূখণ্ড রক্ষার অঙ্গিকার অথবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমর্থন হারানোর ভয়।
জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, সরকার এখনও আলোচনায় আছে, তবে আপসের সীমা খুব সংকীর্ণ। কবে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে—তা এখনও অনিশ্চিত।
এম
আপনার মতামত লিখুন :