যেভাবে পাকিস্তানি যুবতীদের ফাঁদে ফেলে চীনা পুরুষরা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০৭:৫৬ পিএম
যেভাবে পাকিস্তানি যুবতীদের ফাঁদে ফেলে চীনা পুরুষরা

মুকাদাস আশরাফ নামের এক পাকিস্তানি নারী। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার বাবা-মা তাকে একজন চীনা নগারিকের সঙ্গে বিয়ে দেন, যিনি বিয়ে করার জন্য পাকিস্তানে এসেছিলেন। বিয়ে হওয়ার পাঁচ মাস পর অন্তঃসত্ত্বা মুকাদাস তার নিজের দেশে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, সেখানে তাকে চরম নির্যাতন করা হতো তাই তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান।

শুক্রবার ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে আটকে দেয়া হয়েছে চীনা ২ জন পুরুষ ও পাকিস্তানের ৩ যুবতীকে। দেশটির ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) অভিযোগ করেছে, পাকিস্তানি এসব যুবতীকে চীনা ওই যুবকরা বিয়ের ফাঁদে ফেলে পাচার করছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে চীনে নিয়ে সেখানে জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি অথবা অঙ্গহানি করে ব্যবসায় ব্যবহার করা হতো। এ অভিযোগে পাকিস্তানে চীনা দূতাবাস বলেছে, পাকিস্তান ও চীনের যৌথ তদন্তে এমন অভিযোগের কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় নি। এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানের অনলাইন ডন। 

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, মুকাদাস পাকিস্তানের শত শত খ্রীস্টান তরুণীর একজন যাদেরকে গত বছরের শেষ থেকে বিয়ের কথা বলে চীনে পাচার করা হয়েছে। দালালরা জোর করে অনেক তরুণীকে চীনে পাচার করেন। এমনও হয়, বিভিন্ন গির্জার সামনে থেকে গোপনে তারা ‘বিবাহযোগ্য’ তরুণীদের ধরে নিয়ে যায়।

যেসব বাবা-মা তাদের সন্তানকে এসব চীনা নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে দেন তারা বলছেন, তাদের জামাতা বেশ টাকাওয়ালা মানুষ এবং তারা ধর্মান্তরিত খ্রীস্টান। বিয়ে হওয়া অনেক তরুণী, তাদের বাবা-মা, মানবাধিকারকর্মী, ধর্মযাজক এবং সরকারি কর্মকর্তা মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন সেসব তরুণী বাধ্য হয়েই বিয়ে করে সেদেশে যান।

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মানবাধিকার ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক মন্ত্রী আসলাম অগাস্টিন এপি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটা স্পষ্টতই মানবপাচার। এসব বিয়ের নেপথ্যে কাজ করে সংশ্লিষ্টদের লোভ ও লালসা। আমি সেসব তরুণীর কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি তারা খুবই দরিদ্র ঘরের মেয়ে।’

পাঞ্জাবের মানবাধিকার ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিষয়ক মন্ত্রী আসলাম অগাস্টিন এই অপরাধের জন্য চীন সরকার ও পাকিস্তানে অবস্থিত চীনা দূতাবাসকে অভিযুক্ত করেন। তার দাবি, চীন সরকার অন্ধের মতো কোনো রকমের প্রশ্ন ছাড়াই এসব মানুষকে ভিসা দেয়ার কাজটি করে থাকে।

তবে তার এমন অভেযোগ অস্বীকার করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, দুই দেশের নাগরিকের মধ্যে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অবৈধ সংস্থাগুলোর জন্য তারা জিরো টলারেন্স (সামান্য পরিমাণ ছাড় না দেয়ার) নীতি অনুসরণ করে।

গত ২৬ এপ্রিল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা হিউম্যান রাইটস এক বিবৃতি দিয়ে, বিয়ের মাধ্যমে মানবপাচারের মতো এসব ঘৃণ্য কাজ বন্ধ করতে চীন ও পাকিস্তান সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, ‘যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে, পাকিস্তানের সেসব তরুণী ও নারীদের চীনে পাচার করার মাধ্যমে যৌন দাসত্বের ঝুঁকিতে ফেলে দেয়া হচ্ছে।’

গত সোমবার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা বিয়ের নামে এমন মানবপাচারের অভিযোগে পাঞ্জাব থেকে আটজন চীনা ও চারজন পাকিস্তানি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। পাক টেলিভিশন চ্যানেল জিও টিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বিয়ের আয়োজন চলছিল ঠিক এমন সময় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

Link copied!