কর এজেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত, স্নাতক হলেই আবেদনে যোগ্য

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৮, ২০২৩, ০৩:১৩ পিএম
কর এজেন্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত, স্নাতক হলেই আবেদনে যোগ্য

ঢাকা: করের আওতা বাড়াতে ‘কর এজেন্ট’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিধিমালাও জারি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

স্নাতক ডিগ্রিধারী যেকোনো ব্যক্তি চাইলেই কর এজেন্ট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। তবে, তালিকাভুক্ত এজেন্ট হতে হলে এনবিআর থেকে কর অভিজ্ঞান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

অন্যদিকে, বার কাউন্সিল বা এনবিআরের তালিকাভুক্ত আইনজীবী কিংবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা সরাসরি ‘কর এজেন্ট’ হওয়ার যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। করযোগ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে কর আদায় করতে পারলে সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া কর থেকে ০.৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কমিশন পাবেন তারা।

এছাড়া বিধিমালায় অসদুপায় বা অনিয়মের জন্য কর এজেন্টের সনদ ও সহায়তাকারীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিধানও রাখা হয়েছে।

গত ২৩ মে এনবিআরের আয়কর বিভাগ থেকে আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) সংক্রান্ত বিধিমালা ইস্যু করা হয়েছে। এনবিআরের করনীতি বিভাগের সদস্য ড. সামস উদ্দীন আহমেদের সই করা আদেশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

মোট ১৯টি ধারা সংযুক্ত করে প্রকাশিত বিধিমালা সম্পর্কে কোনো আপত্তি বা পরামর্শ থাকলে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে সেখানে।

আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারী (টিআরপি) বিধিমালায় যা বলা হয়েছে-
ন্যূনতম স্নাতক পাস হলেই যে কেউ কর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। তবে কর এজেন্ট হতে আগ্রহী প্রার্থীকে এনবিআরে আবেদন করতে হবে। এজেন্ট নিয়োগের যোগ্যতায় আরও বলা হয়েছে, আগ্রহী ব্যক্তিকে কম্পিউটার ও আইসিটি বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞান থাকতে হবে এবং আগে রিটার্ন দাখিল করেছেন এমন প্রমাণ থাকতে হবে। অর্থাৎ কর এজেন্টেকেও রিটার্ন দাখিলকারী করদাতা হতে হবে।

বিধিমালার ৪ ধারায় বলা হয়েছে, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট ও ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা চাটার্ড সেক্রেটারিজ; বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে নিবন্ধিত আইনজীবী এবং এনবিআর স্বীকৃত কর আইনজীবীরা পরীক্ষা ছাড়াই কর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। যদিও বিধিমালায় সনদপ্রাপ্ত কর এজেন্ট কেবলমাত্র আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত ও দাখিল করতে পারবেন। তবে আয়কর অধ্যাদেশের ১৭৪ ধারা অনুযায়ী অনুমোদিত প্রতিনিধি অর্থাৎ কর আইনজীবী হিসেবে গণ্য হবেন না।

বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, এজেন্ট হতে এনবিআরে সরাসরি আবেদন করা যাবে বা সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছেও আবেদন করা যাবে। এনবিআর প্রত্যেক এজেন্টকে একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেবে। কর এজেন্ট শুধু আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করে দিতে পারবেন।

আর কর এজেন্টকে আদায় করা কর থেকে একটি অংশ প্রণোদনা হিসেবে দেবে এনবিআর। যা বিধিমালার ধারা-১২ এ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে- প্রথম তিন বছর আদায় করা ন্যূনতম করের ১০ শতাংশ, পরবর্তী সময়ে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ২ শতাংশ, পরবর্তী ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ১ শতাংশ ও অবশিষ্ট করের ওপর ০.৫০ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন। চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য তিনি যথাক্রমে ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ, দশমিক ৫০ শতাংশ ও দশমিক ২৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন। তবে কর এজেন্টের প্রণোদনার ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রাপ্য হবে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান। যদি কোনও করদাতা প্রথম বছরের পর অন্য কোনও এজেন্টের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দেন তাহলে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বছরের জন্য ওই এজেন্ট সেই হারে প্রণোদনা পাবেন। প্রণোদনা পেতে কর এজেন্টকে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এনবিআরে আবেদন করতে হবে।

এনবিআর ভৌগোলিক এলাকাভিত্তিক এক বা একাধিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন করতে পারবে। এক্ষেত্রে নির্বাচিত হতে হলে আয়কর বিষয়ক সেবা ও পরামর্শ দেওয়ায় অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পাবে। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতা থাকতে হবে ও কম্পিউটার ল্যাবসহ রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহের সক্ষমতা থাকতে হবে। সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে- কর এজেন্ট বা আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতকারীদের প্রোফাইল সংরক্ষণ করা, কর্মদক্ষতা নিরীক্ষা করা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যক্রম গ্রহণ করা।

বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, করযোগ্য ব্যক্তির রিটার্ন প্রস্তুতে সহায়তা করবেন কর এজেন্ট। এর আগে অবশ্যই ওই ব্যক্তির সম্মতি নিতে হবে। প্রস্তুত করা রিটার্নের একটি কপি করদাতাকে দিতে হবে। সব শেষে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র নিজের কাছে ও করদাতাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

বিধিমালার ১৭ ধারায় অসদুপায় বা অনিয়মের জন্য কর এজেন্টের সনদ ও সহায়তাকারীর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, কর এজেন্ট করদাতাকে রিটার্ন জমার স্লিপ না দিলে, করদাতার তথ্য সঠিকভাবে রিটার্নে উল্লেখ না করলে, প্রতারণামূলকভাবে অর্থ দাবি করলে বা আর্থিক অনিয়ম বা জালিয়াতি করলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে রিটার্নে আয় কম দেখিয়ে কর ফাঁকি দিলে সনদ বাতিল করা হবে। এছাড়া সন্তোষজনক কর এজেন্ট তালিকাভুক্ত করতে ব্যর্থ হলে বা রাজস্ব ও জনস্বার্থ পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনবিআর চুক্তি বাতিল করবে। কর এজেন্ট বা সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান করদাতার তথ্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করলে এনবিআর উভয়ের বিরুদ্ধে আয়কর আইনে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Link copied!