আজ সৈয়দ শামসুল হকের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৭, ২০২২, ০৭:২৬ পিএম
আজ সৈয়দ শামসুল হকের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী

সৈয়দ শামসুল হক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা : বাংলা সাহিত্যকে যে কজন আভিজাত্যের শিখরে তুলে ধরেছেন, তাঁদের মধ্যে সৈয়দ শামসুল হক অন্যতম। স্বকীয় সুর, স্বর, সৃষ্টি আর লেখনিতে এমন সহজিয়া ধরন কেবল তিনিই খুঁজে দিয়েছেন বাঙালিকে।

কবিতা, গান, নাটক, গল্প-উপন্যাস, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনাসহ সাহিত্য ও শিল্পের বিচিত্র ভুবনে কাজ করেছেন তিনি। সাহিত্যের সব শাখায় সাবলীল বিচরণই এই মানুষটিকে এনে দিয়েছে সব্যসাচী উপাধি।

তাঁর সৃষ্টি তাঁকে দিয়েছে অমরত্ব, করেছে অবিনশ্বর। তিনি স্থান করে নিয়েছেন বাংলাভাষা-সাহিত্যের অঙ্গণজুড়ে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার হিরন্ময় এই সাহিত্যিকের জন্মদিন আজ মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর)।

সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। মা হালিমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী।

ভাষা-সংস্কৃতি আর মুক্তিযুদ্ধ তাঁর রচনার প্রধান অনুসঙ্গ। ‘দেয়ালের দেশ’ দিয়ে লেখা শুরু, মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান সৈয়দ শামসুল হক। তারপর একের পর এক কালজয়ী সৃষ্টি। 

মঞ্চ নাটকে প্রাণসঞ্চারী ভূমিকায় সৈয়দ শামসুল হকের একেকটা বিরল চিত্রনাট্য। গ্রামীণ জীবনজাত গন্ধ-কলায় তাঁর ডাক পরাণের গহীন থেকে। নিষিদ্ধ লোবান, গণনায়ক তাঁর জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্ম। কৃষক বিদ্রোহ নিয়ে লেখেন নূরলদীনের সারাজীবন। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ অনবদ্য, বিস্ময়কর।

জীবন এবং শিল্প আবর্তিত হয় তার সৃজিত ‘খেলারাম খেলে যা’-সহ সকল রচনায়; পদ্যে-কবিতায়। সংস্কৃতির যুদ্ধেও অবতীর্ণ হন- গলা ছাড়েন, জাগো বাহে, কোনঠে সবায়। 

সেক্সপিয়ারের দ্য টেম্পেস্ট, ম্যাকবেথ ছাড়াও বিশ্বসাহিত্যের নানা রচনা অনুবাদ করেছেন তিনি। সব্যসাচী লিখেছেন গান, সিনেমার চিত্রনাট্য। সমসাময়িক বাংলাদেশ এবং মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতিতে ছুঁয়ে দিয়েছেন অলৌকিক পরশ। 

৬২ বছরের লেখক জীবনে অসংখ্য জাতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মাননা ছাড়াও একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন তিনি। এছাড়াও ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আদমজী সাহিত্য পুরস্কারে। 

২০১৬ সালে অনন্তে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তী। সাহিত্যের সব ক্ষেত্রে সদর্প বিচরণকারী সৈয়দ হক বেঁচেছিলেন ৮১ বছর।

তবে এই ধরণীতে তাঁর বাঁচার ইচ্ছে ছিল ১১৮ বছর। আশি পেরোনোর আয়োজনে এর কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সৈয়দ হক বলেছিলেন, ‘এখনো অপেক্ষায় কত কবিতা, কত নাটক, কত গল্প! করোটির ভেতরে শব্দের কী অবিরাম গুঞ্জন!’ এমন আকাঙ্ক্ষা থাকলেও চলে যেতে হয়েছে তাকে।

সৈয়দ শামসুল হকের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সৈয়দ শামসুল হক স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ আলমগীর জানিয়েছেন, জন্মদিন উপলক্ষে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মেলায় লেখক ও কবি সম্মেলন, স্বরচিত সাহিত্য পাঠ, সৈয়দ হকের লেখা কবিতা পাঠ, সৈয়দ হকের আলোকচিত্র প্রদর্শন, কবির লেখা সংগীত পরিবেশন ও দিনভর বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি আরো জানান, সবশেষে রাতে কবির জন্মদিনকে বর্ণিল করতে ৮৭টি ফানুস ওড়ানো হবে। সেসময় তার লেখা বিখ্যাত গান ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঢুস’ গানটি পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট শিল্পীরা। এছাড়া সৈয়দ হকের জন্মদিন উপলক্ষে লিটলম্যাগ ‘মেঠোজন’-এর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ হবে এই দিনে।

কবির একমাত্র ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক জানান, কুড়িগ্রামে এবার এক দিনের জন্য সৈয়দ হক মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা আগামীতে এই মেলার ব্যাপ্তি আরো বাড়বে। ৩ থেকে ৭ দিন মেলাটি অনুষ্ঠিত হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!