এবার ভূমি জরিপ ‘শিখতে’ ইউরোপ ও ফিলিপাইন যাচ্ছেন ১৩০ জন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০, ০২:৫৭ পিএম
এবার ভূমি জরিপ ‘শিখতে’ ইউরোপ ও ফিলিপাইন যাচ্ছেন ১৩০ জন

 ঢাকা: এবার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ কাজের জন্য ‘প্রশিক্ষণ কোর্সে’ ১০০ জন যাবেন ফিলিপাইন। একই প্রকল্পের আওতায় ‘শিক্ষা সফরের’ জন্য আরও ৩০ জন যাবেন ইউরোপের কোনো এক দেশে। কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের হিড়িক থামছে না। শুধু তাই নয়, এ উদ্দেশ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ১ হাজার ২৩৭ কোটি টাকার প্রকল্পে বিভিন্ন খাতে মাত্রাতিরিক্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে।  এর মধ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের জন্য দুই সেট আকাশযান (ড্রোন) কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। সার্ভার কম্পিউটারের জন্য মন্ত্রণালয়ের চলমান অন্য প্রকল্পের তুলনায় ১৩ গুণ বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। অন্যান্য মেশিন ক্রয়ের ব্যয়ও দ্বিগুণ ধরা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের আওতায় নিজেদের বিদেশ ভ্রমণ নিশ্চিত করে এসব ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তা কমায়নি। তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, বিদেশ সফরের বিষয়ে কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে হবে। শিগগিরই নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ভূমি মন্ত্রণালয় ‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে ভূমি জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) থেকে ১ হাজার ২৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা সম্প্রতি হয়েছে। সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এই পিইসি সভার কার্যপত্র বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) থেকে জানা গেছে, প্রকল্পের মূল কাজ হবে পটুয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলা ও বরগুনার ৬টি উপজেলায় সরসরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করা। এছাড়া দেশের ৪৭০টি উপজেলার আরএস (রিভিশনাল সার্ভে) জরিপের সব মৌজা ও ম্যাপের ডিজিটালাইজড কপি এবং ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে প্রকল্পের আওতায়। চলতি বছরের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন নাগাদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় ভূমি মন্ত্রণালয়।

কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মোট ১০০ জন কর্মকর্তা ৫টি ব্যাচে ভারত বা ফিলিপাইন গিয়ে দুই থেকে তিন সপ্তাহের ‘প্রশিক্ষণ কোর্স’ করবেন। এছাড়া ডিজিটাল ভূমি জরিপ বিষয়ে অভিজ্ঞতার বিনিময়ের জন্য ৩০ জন কর্মকর্তা বিদেশে ‘শিক্ষা সফরে’ যাবেন। পরবর্তীকালে আলাপ-আলোচনা করে ‘শিক্ষা সফরের’ দেশ ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কোর্স সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানে হবে তা আগেই নির্ধারণ করতে হবে।

প্রতিটি ব্যাচে অবশ্যই ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখতে হবে। আর ডিজিটাল ভূমি জরিপের অভিজ্ঞতা নিতে পরিকল্পনা কমিশনের ৫ জন, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ৫ জন, জরিপ অধিদপ্তরের ৫ জন এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১৫ জন অন্তর্ভুক্ত হবে। এসব কর্মকর্তা আলোচনা সাপেক্ষে ‘উপযুক্ত’ দেশে এক সপ্তাহের ‘শিক্ষা সফর’ করবেন। এজন্য ডিপিপিতে টেবিল আকারে খাতভিত্তিক বরাদ্দ দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রস্তাবনায় পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডির কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। পিইসি সভায় তাদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার পর অন্যান্য ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও ব্যয় কমানো হয়নি। ‘উপযুক্ত’ দেশ বলতে কী বোঝানো হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এরা ইউরোপের কোনো এক দেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাবেন না।

এ বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, বিদেশ সফর নিয়ে কর্মকর্তারা রীতিমতো বাড়াবাড়ি করছেন। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণেও তারা ইউরোপ যেতে চান। যদিও ইউরোপ স্ট্যান্ডার্ড কোনো সড়ক বাংলাদেশে নির্মিত হয় না। এটার বিষয়ে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত বলে মনে করি। কারণ এটা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে।

কার্যপত্রে বলা হয়েছে, বেশকিছু ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি এয়ার কন্ডিশনার ও ১৫টি এনভায়রনমেন্ট পলুশন কন্ট্রোল ইক্যুইপমেন্ট মেশিন ক্রয়ে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এছাড়া প্রস্তাবিত ‘টোটাল স্টেশন’ ও ‘জিএনএসএস মেশিন’ স্থাপনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের চলমান আরেকটি প্রকল্পের চেয়ে দ্বিগুণ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সার্ভার কম্পিউটার বাবদ ১৩ গুণ বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। দুটি ড্রোন কেনার জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। যদিও ২০১৬ সালে এই কনফিগারেশনের ড্রোনের বাজার মূল্য ১ কোটি টাকার বেশি নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে ডিপিপিতে। এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি পিইসি সভায় জানান, বর্তমানে এর দাম বেড়েছে।

এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এত অত্যাধুকি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার মতো সক্ষমতা আছে কি না জানতে চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্পে উচ্চ বেতনে পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হলেও তাদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়নি। সেটিও বিস্তারিত উল্লেখ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পিইসি সভায়।

এ বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একাধিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, প্রশিক্ষণ খুব জরুরি। তবে পরিকল্পনা কমিশন ও আইএমইডি এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কোথায় কাজে লাগাবেন তা জানি না। তারা এ সংক্রান্ত বাড়তি ব্যয় নিয়ে কথা বলতে চাননি। মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় প্রসঙ্গে তারা বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই প্রকল্প ব্যয় ধরা হচ্ছে। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হচ্ছে না।

সোনালীনিউজ/টিআই

Link copied!