ঢাকা: একসময় ছিল ভারতের করোনা মোকাবিলায় মডেল রাজ্য, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গিয়েছিল কেরালার কেরামতির খবর। কিন্তু ধীরেধীরে সেই কেরালাও করোনার কড়াল গ্রাসে ঢাকা পড়ে যায়। তা থেকে দক্ষিণের এই রাজ্য যে এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি, তা কেরালায় সম্প্রতি স্কুল খোলার পর থেকেই স্পষ্ট। মাত্র কয়েক দিন আগেই কেরালায় দশম-দ্বাদশের শিক্ষার্থীদে জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্কুল। আর তারপরই পাশাপাশি দু'টি স্কুলের দশম শ্রেণির ১৯২ জন শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে এ ভাইরাসের কবলে পড়েছেন ৭২ জন স্কুল কর্মীও।
আশঙ্কার এই খবর মিলেছে কেরালার মালাপ্পুরম জেলা থেকে। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মালাপ্পুরমের জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘একজন ছাত্রের শরীরে করোনার খোঁজ মিলতেই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের কারণেই বাকি পড়ুয়া ও কর্মীদের টেস্ট করানো হয়েছিল। পাশাপাশি দুটি স্কুলের পড়ুয়াদের সকলেরই করোনা টেস্ট করা হয়েছিল। কীভাবে এতজনের শরীরে করোনা ছড়িয়ে পড়ল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
যে কেরালার করোনা মোকাবিলার ধরন সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিল, সেই রাজ্যের এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষের যথাযথ সতর্কতা না মানাকেই কাঠগড়ায় তুলছেন। যদিও গত বছর জানুয়ারি মাসে কেরালাতেই দেশের প্রথম করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছিল। তারপর সাফল্য এসেছিল। কিন্তু ক্রমেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বর্তমানে কেরালায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দশ লক্ষের কাছাকাছি। রবিবারও মারণ ভাইরাসে সে রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৭৫ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের।
করোনা আবহে স্কুল খোলা নিয়ে নানা মত রয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের। এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই স্কুলশিক্ষা দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছে, বাড়ি থেকে স্কুল, স্কুল থেকে বাড়ি। যাতায়াতের সময় রাস্তার ভিড়ে শারীরিক দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে পড়ুয়াদের ছাতা ব্যবহার করতে হবে। বলা হয়েছে ছাতা ব্যবহার করলে, আশপাশে কেউ ঘেঁষতে পারবেন না। ১১ মাস বাদে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি স্কুল খোলার আগে এমনই একগুচ্ছ গাইডলাইন প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুলশিক্ষা দফতর। ৫২ পাতার বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। চাইলে রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলিও তা অনুসরণ করতে পারে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। বিস্তারিত ওই গাইডলাইনে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা প্রশাসকদের কাকে কী দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা-ও বলা হয়েছে।
স্কুল খোলার প্রস্তুতির জন্য শিক্ষকদের তার আগেই স্কুলে যাতায়াত শুরু করতে বলা হয়েছে। স্কুলের সমস্ত বিষয় দেখভাল, স্যানিটাইজ করা, স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করা, পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কড়া নজর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানদের। সে ক্ষেত্রে কোনও অনিয়ম বা অবহেলা হলে প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। স্কুল খোলার আগে জেলাশাসক ও বিডিওদের সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, পরিচালন সমিতিগুলির সঙ্গে বৈঠক করে স্বাস্থ্যবিধি মানার যাবতীয় খুঁটিনাটি বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তবে নির্দেশিকাগুলিতে বলা নেই যে কতজন পড়ুয়াকে সর্বাধিক এক সঙ্গে স্কুলে আনা যাবে। যা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে শিক্ষা শিবিরে। স্কুলশিক্ষা দপ্তরের এক কর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য-বিধি মানতে হবে। তার জন্য যার যেমন ক্ষমতা, সেই অনুযায়ী ছাত্র আনতে পারবে। প্রয়োজনে স্কুল চাইলে রুটিন পরিবর্তনও করতে পারে। তথ্যসূত্র-এইসময়
সোনালীনিউজ/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :