ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে নেই মাস্ক

হাটে উধাও স্বাস্থ্যবিধি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২১, ১১:৩০ এএম
হাটে উধাও স্বাস্থ্যবিধি

ঢাকা : ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো। ব্যাপক লোকসমাগম হলেও হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি উধাও। বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখেই নেই মাস্ক। নেই সামাজিক দূরত্বও। এমনকি হাটের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক টানেল ও বেসিন বসানো হলেও কাউকে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত শনিবার থেকে রাজধানীর হাটগুলোতে শুরু হয়েছে পশুর বেচাকেনা। অধিকাংশ হাটেই স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা কিছুটা লক্ষ করা গেলেও পাইকারদের মধ্যে নেই স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই, যদিও হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কোথাও কোথাও কিছুটা তদারকি দেখা গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।

এ অবস্থায় সচেতন ব্যক্তিরা হাটে প্রবেশের সাহস করতে পারছেন না। নগরীর হাটগুলো ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। দুই সিটির শর্ত অনুযায়ী হাটে মাস্ক, সাবান, জীবাণুমুক্তকরণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করবেন ইজারাদার। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবার ব্যক্তিগত সুরক্ষা জোরদার করা ও মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। হাঁচি, কাশির শিষ্টাচার, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়ার কথা সার্বক্ষণিক মাইকে প্রচার করতে হবে। হাটে প্রবেশের সময় গ্রাহক চাইলে তাকে বিনামূল্যে মাস্ক দিতে হবে।

মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পানি ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পশুর বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার করতে হবে। একটি পশু থেকে আরেকটি পশু এমনভাবে রাখতে হবে যেন ক্রেতাদের মধ্যে তিন ফুট দূরত্ব থাকে। ভিড় এড়াতে মূল্য পরিশোধ ও হাসিল আদায় কাউন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মূল্য পরিশোধের সময় সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজনে রেখা টেনে বা গোল চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে। হাটের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পশু ঢোকাতে হবে।

শর্তে আরো বলা হয়েছে, প্রতিটি হাটে সিটি করপোরেশনের এক বা একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্বেচ্ছাসেবী মেডিক্যাল টিম গঠন করে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। টিমের কাছে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ডিজিটাল থার্মোমিটার থাকতে হবে। তাৎক্ষণিকভাবে রোগীকে আলাদা করার জন্য হাটে একটি আইসোলেশন ইউনিট রাখতে হবে। হাটের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতাকে প্রবেশ করতে দিতে হবে। বাকিরা বাইরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করবেন।

তা ছাড়া একটি পশু কিনতে একসঙ্গে দুজনের বেশি হাটে ঢুকতে পারবে না। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার গেটের দুই পাশে এবং পশুর হাটের মাঝে পর্যাপ্ত সংখ্যক পানির আধার, বেসিন ও সাবান এবং আলাদা স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। হাটে ঢোকার আগে ও বের হয়ে ক্রেতাকে হাত ধুতে হবে। হাটে সব কর্মীকে স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদেরও ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এসব শর্তগুলোর মধ্যে মাঝে মধ্যে শুধু ইজারাদার মাইকে সচেতনতা মূলক কিছু বার্তা ঘোষণা করছেন। আর হাটের বিভিন্ন স্থানে স্বাস্থ্যবিধির সচেতনতামূলক কিছু নিয়ম সংবলিত বার্তা ঝুঁলিয়ে রাখা হয়েছে।

রোববার (১৮ জুলাই) রাজধানীর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বলতে কোনও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষকে মাস্ক ছাড়াই হাটে দলবেঁধে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। কিছু স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হলেও তারা পশুর হাসিল আদায়ে ব্যস্ত। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তাদেরও কোনও সচেতনতা নেই। অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবককে মুখের নিচে মাস্ক ঝুলিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

একই চিত্র আফতাব নগর হাটের। হাটে বিপুল সংখ্যক কোরবানির পশু দেখা গেলেও বেচা-বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। তবে হাটে শিশু-বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ দেখা গেছে। হাটের প্রবেশপথগুলোতে হাত ধোয়ার কোনও ব্যবস্থা দেখা যায়নি। ভেতরেও নেই কোনও স্বাস্থ্য বিধি তবে হাটটি পরিদর্শনে এসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম কঠোর বার্তা দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনে হাট বাতিল করা হবে।

মেরাদিয়া হাটে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার প্রধান সড়কটিতে গরুর হাট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাটের স্বেচ্ছাসেবকরা ট্রাক থেকে গরু নামানোর কাজে ব্যস্ত। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে নেই কোনও সচেতনতা। হাটটিতে সিটি করপোরেশনের ঘোষণা অনুযায়ী কোনও ভ্রাম্যমাণ আদালতও দেখা যায়নি।

বনশ্রীর বাসিন্দা হাজী আশরাফুল ইসলাম বলেন, যে পরিমাণ মানুষ তাতে খুবই আতঙ্ক লাগবে। করোনাকালেও কোনও স্বাস্থ্যবিধি নেই। যে যার মতো করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিনা কারণেও হাটে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম ঘটছে। কেউ বাধাও দিচ্ছে না। আমি একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ। হাটে ঢুকতে এখন আমার আতঙ্ক লাগছে।

খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান বলেন, কীসের স্বাস্থ্যবিধি আর নিয়ম-কানুন। হাট বসানোর আগে সিটি করপোরেশন অনেক কথা বলে। কিন্তু কোনও জরিমানা বা কোনও সতর্কতা কিছুই করা হয় না। অনেক শর্তের কথা শুনেছি। কিন্তু সব তো দেখি কাগজে আর করলে। হাটে নেই।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ও হাট মনিটরিং টিমের আহ্বায়ক মো. মফিজুর রহমান বলেন, শনিবার আমরা মেয়রের সভাপতিত্বে একটি বড় মিটিং করেছি।  

রোববার (১৮ জুলাই) থেকে আমাদের সকল টিম মাঠে রয়েছে। আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাঈদ নগর ও আফতাব নগর হাট পরিদর্শন করেছেন।

পুরান ঢাকার ধোলাইখালের হাটের অবস্থা আরও নাজুক। রাস্তার দুপাশে পশু, এসব পশুর গা ঘেঁষে হেঁটে চলেছেন হাটে আগতরা। আর মাঝ বরাবর চলছে যানবাহন। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন দূরে থাক, এ এক লেজেগোবরে দশা।

এই সিটির আরও বেশকয়েকটি হাটে একই অবস্থা দেখা গেছে। হাটগুলোতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির তেমন কোনও মনিটরিং দেখা যায়নি। বিষয়টি সম্পর্কে কথাও বলতে রাজি হননি সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন।

কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে মনে করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

রোববার (১৮ জুলাই) করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এ কথা বলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, যেখানে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িয়ে আছে, সেখানে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি বরাবরই বলি।

ইতোমধ্যে সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছি। যেহেতু কোরবানির পশুর হাটগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হয়, আমরা জানি বিষয়টি নিয়ে তারাও নজরদারিতে আছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই সচেতনতা ও দায়িত্ব বোধের বিষয়টি আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকদের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম আছে। তারা তাদের মতো করে দেখ-ভাল করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রত্যেকেই আমরা দায়িত্বশীল নাগরিক। দায়িত্বের জায়গাটি তাদের মনে করিয়ে দেওয়া এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের প্রত্যেকেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। যে যার জায়গা থেকে প্রত্যেকের ভূমিকাটি যদি আমরা যথাযথভাবে পালন করি, তাহলে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি আরেকটু ভালোভাবে মেনে চলা সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। সেখানে মাত্র দুই হাজার ৩৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে এবং মাত্র দুই জন মারা গেছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Link copied!