১৪ বছরে ভয়াবহ যত অগ্নিকাণ্ড

  • নিউজ ডেস্ক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মার্চ ২, ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম
১৪ বছরে ভয়াবহ যত অগ্নিকাণ্ড

ঢাকা : ২০০৯ সালে রাজধানীর জনপ্রিয় শপিং মল বসুন্ধরা সিটিতে আগুন, ২০১০ সালে নিমতলী ট্র্যাজেডি এবং ২০১৯ সালের চুড়িহাট্টার আগুনের ঘটনা মনে করে এখনও শিউরে ওঠেন রাজধানীবাসী। এই বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন সময় ঘটেছে আরও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এসব ঘটনায় সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।

সবশেষ বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি)  রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চিকিৎসাধীন আহতরা কেউ শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন।

বসুন্ধরা সিটি : ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ বসুন্ধরা সিটিতে লাগা আগুনে মারা যান সাতজন। একই জায়গায় ২০১৬ সালে আবারও ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। ঘটনাটি পুরো ঢাকা শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছিল তীব্রভাবে।

নিমতলী ট্রাজেডি : ২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের গুদামে বিস্ফোরণ থেকে আগুনের ঘটনায় নারী এবং শিশুসহ নিহত হয় ১২৪ জন। আহত হয় অর্ধশতাধিক। নিমতলীর ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টায় ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় দুই বোন রুনা আর রত্মা এবং পাশের বাড়িতে আসমা নামে এক মেয়ের বিয়ের আয়োজন চলছিল। কনেরা পার্লারে সাজছিল। আর বাড়ির নিচতলায় রান্না চলছিল। রান্নার জায়গার পাশেই ছিল কেমিক্যালের গুদাম। প্রচণ্ড তাপে গুদামে থাকা কেমিক্যালের প্লাস্টিক ড্রাম গলে যায়। এরপর মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে দরজা-জানালা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়।

চকবাজারের চুড়িহাট্টা ট্রাজেডি : ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। যা ছড়িয়ে পড়ে সড়কে যানজটে আটকে থাকা পিকআপ, প্রাইভেটকার, রিকশা, ঠেলাগাড়ি ও মোটরসাইকেলে। কিছু বুঝে উঠার আগেই যানজটে আটকে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। চুড়িহাট্টা মোড় হয়ে ওঠে যেন মৃত্যুকূপ! আগুন লাগার ১৪ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। তার আগেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় ৬৭ জনের। পরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭১। এতে আহত হন কয়েক শ মানুষ।

বনানী এফআর টাওয়ার ট্রাজেডি : ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৭০ জন। অগ্নিকাণ্ডের পর আগুন যখন দ্রুত অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে, তখন ভবনের ভেতর আটকাপড়া অনেকে ভবনের কাঁচ ভেঙ্গে ও রশি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন নিচে পড়ে মারা যান। ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমান এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৬ ঘণ্টা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

মগবাজারের বিস্ফোরণ : রাজধানীর মগবাজারে ২০২১ সালের ৭ জুন ‘রাখি নীড়’ নামে একটি ভবনের নিচ তলায় বিস্ফোরণের পর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই শতাধিক ব্যক্তি। বিস্ফোরণের শব্দ এতটাই বিকট ছিল যে প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা বলেছেন, এমন বিকট আওয়াজ তারা আগে শোনেননি।

রাজধানীর বস্তি আগুন : ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর আগে, ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর হাজারীবাগ বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন শিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে বউবাজার বস্তিতে আগুনে পুড়ে যায় ৫০টি ঘর। এ ছাড়া ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর একই বস্তিতে লাগা আগুনে প্রাণ হারান ১১ জন। একই বছর ১২ মার্চ রাজধানীর পল্লবীর ইলিয়াস আলী মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে বস্তির প্রায় ৫ হাজার ঘরের সব পুড়ে যায়। এ ছাড়া মাঝে মাঝেই বস্তিগুলোতে অগ্নিকাণ্ড ঘটতে থাকে।

বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে আগুন : ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুন লাগে। সেদিন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের পাশাপাশি আরও চারটি মার্কেট আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তারা বলেছে, মার্কেটের তৃতীয় তলায় একটি এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সিগারেটের আগুন অথবা মশার কয়েলের আগুন থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্ব হারিয়েছেন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকার।

অন্যদিকে ১৫ এপ্রিল ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ২২৬টি দোকান পুড়ে গেছে। মার্কেটের মালিক সমিতি বলছে, আগুনে ৩৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বৈদ্যুতিক গোলযোগ (শটসার্কিট) থেকে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি।

এমটিআই

Link copied!