গাবতলী পশুর হাট ইজারা

সরকারের ২২ কোটি গচ্ছা, ‘প্রক্রিয়াগত ত্রুটি’ না অন্য কিছু?

  • সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম
সরকারের ২২ কোটি গচ্ছা, ‘প্রক্রিয়াগত ত্রুটি’ না অন্য কিছু?

ঢাকা: চলতি বাংলা সনের ১৪৩২ মেয়াদে ঢাকার গাবতলী গবাদি পশুর হাটের ইজারা দিতে ৩ মার্চ দরপত্র আহবান করে হাটের নিয়ন্ত্রক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি। দর জমা দেওয়ার শেষ দিন ১৯ মার্চ দরপত্র বাক্স খোলা হয়। এবার ডিএনসিসি নির্ধারিত ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার ৩০০ টাকা ইজারা মূল্যের বিপরীতে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে আরাত মটরস। তার দর ছিল ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। 

সর্বশেষ ১৪৩১ বাংলা সনে সর্বোচ্চ দরদাতা ১৭ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কার্যাদেশ পেয়েছিল। গত বছরের চেয়ে ৫ কোটি টাকা বেশি দর জমা পড়লেও প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কথা উল্লেখ করে টেন্ডার বাতিল করেছে ডিএনসিসি। এতে প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ২২ কোটি টাকা গচ্ছা যেতে বসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ডিএনসিসির টেন্ডার ডকুমেন্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দরপত্র বক্স খুলে দেখা যায় নির্ধারিত সময়ে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে। সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছে আরাত মটরস। তার দর ছিল ২২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২১ কোটি ৬৫ লাখ ৭০ হাজার ৩০০ টাকার দর দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে এস এফ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় হয়েছে রাইয়ান এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা দর দিয়েছিল। 
দি সিমেন্ট জয়েন্ট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ১৪ কোটি ৬৩ লাখ দর দিয়ে চতুর্থ এবং ১৪ কোটি ৬২ লাখ দর দিয়ে পঞ্চম হয়েছে আবু বকর সিদ্দীক নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দি সিমেন্ট জয়েন্ট ও সৈয়দ আবু বকর সিদ্দীক হালনাগাদ আয়কর সনদের সত্যায়িত কপি ও পে অর্ডার দাখিল করেনি। ফলে তাদের বাদ দেওয়া হয়।

দরপত্র খোলার এই প্রক্রিয়াতে জড়িত ছিলেন দরপত্র উন্মুক্ত করন কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো: নুরুজ্জামান, দরপত্র উন্মুক্ত করন কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: শাহীদুল ইসলাম।

গত ৭ এপ্রিল দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় ১৪ এপ্রিলের পূর্বে ১৪৩২ বঙ্গাব্দের জন্য ইজারা কার্যক্রম সম্পন্ন করে হাটের দখল নতুন ইজারাদার এর অনুকুলে বুঝিয়ে দিলে ডিএনসিসি রাজস্ব আদায়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে উপস্থিত সকল সদস্য একমত পোষন করেন।

মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মেসার্স আরাত মটর, প্রোপাইটর : আরাত হানিফ, পিতা: মো: হানিফ, সাং:-৭৫/২, কোটবাড়ী, দারুসসালাম, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ এর অনুকুলে ইজারা প্রদানের বিষয়ে সভায় সর্বসম্মত সুপারিশ গৃহীত হয়।

এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান, মূল্যায়ন কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: মঈন উদ্দিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী, কমোডর এবিএম সামসুল আলম, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মো: মনিরুজ্জামান এবং সদস্য সচিব মো: নুরুজ্জামান।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশ ডিএনসিসির প্রশাসকের কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি সেটি অনুমোদন না দিয়ে বলেন, সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুচ্ছেদ ২.৭ মোতাবেক ইজারা বিজ্ঞপ্তি সিপিটিইউ এর ওয়েব সাইটে প্রদান না করায় এই দরপত্রে বিধির ব্যাতয় হয়েছে। পূন:দরপত্রের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে। 
বর্তমানে অতীতের ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২.১০ এর মোতাবেক খাস আদায় চলমান পদক্ষেপ নেয়া হোক।

যদিও ইজারাতে পিপিআর অনুসরণের নিয়ম নেই বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। সিপিটিইউ এর সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন বলেন, ইজারাতে পিপিপিআর অনুসরণ হয় না। সুতারাং ইজারাতে সিপিটিইউ এর ওয়েবসাইটে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়াও আবশ্যক না।

ডিএনসিসির প্রশাসকের এই নির্দেশনার পর পুন:দরপত্রের জন্য ১৫ এপ্রিল নথি উপস্থাপন করা হলেও এখন পর্যন্ত অনুমোদন করা হয়নি। ডিএনসিসির নিজে খাস আদায় করার কথা বললেও মূলত একটি গ্রুপের লোকদের দিয়ে ঈদ-উল আজহা পর্যন্ত খাস আদায়ের করার জন্যই পুন:দরপত্রের ফাইলটা অনুমোদন না দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

খাস আদায়ের সিদ্ধান্তের পর ডিএনসিসি নিজে আদায়ের কথা বললেও বিশেষ একটি গ্রুপকে দিয়ে এটি আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সর্বোচ্চ দরদাতার দেওয়া দর অনুযায়ী এক বছরের জন্য শিডিউল ক্রয়, প্রস্তাবিত দর, ভ্যাট, আয়কর, নিরাপত্তা জামানত, পরিচ্ছন্ন ফিসহ মোট ২৯ কোটি টাকা রাজস্ব পেত সরকার। সেই হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ টাকা আদায় হওয়ার কথা থাকলেও তার ১৫ শতাংশও সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না। 

খাস আদায়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত ১৫ এপ্রিল ৯৯ হাজার ৯৬০ টাকা, ১৬ এপ্রিল ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৭২ টাকা, ১৭ এপ্রিল ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৫২০ টাকা, ১৮ এপ্রিল ৬১ হাজার ৬০৮ টাকা, ১৯ এপ্রিল ৫৫ হাজার ৪৭৫ টাকা, ২০ এপ্রিল ৫৫ হাজার ৪৭৫ টাকা খাস আদায় হয়েছে। যা সর্বোচ্চ দরদাতার দেওয়া দরের ২০ শতাংশেরও কম।

এ বিষয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মিটিংয়ে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

সর্বোচ্চ দর দেওয়া আরাত মটরসের কর্ণধার আরাত হানিফ বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে তারা কোনো কার্যাদেশ পাননি। বাতিল বা পুনরায় দরপত্রের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে তা এখনো জানানো হয়নি।

এসআই/আইএ

Link copied!