ভূমিকম্পের কেন্দ্রে পরিণত হলো নরসিংদী, সামনে আরও বড় কম্পনের আশঙ্কা!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৫, ০৭:৫৯ পিএম
ভূমিকম্পের কেন্দ্রে পরিণত হলো নরসিংদী, সামনে আরও বড় কম্পনের আশঙ্কা!

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার কাছে নরসিংদীর মাধবদীতে শুক্রবার যে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছিল, তা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কাঁপিয়েছে পুরো দেশ। এর জেরে এখন পর্যন্ত মারা গেছে অন্তত দশ জন, আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। ভূমিকম্পটি ছিল ৫ দশমিক ৭ মাত্রার এবং উৎপত্তিস্থল মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে। দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, এটি স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, প্রায় ৭ কোটির মতো মানুষ এই ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে শুরু হওয়া কম্পনটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ অধিকাংশ এলাকায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। আজ শনিবার একই জেলায় আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৩ দশমিক ৩। উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর পলাশ উপজেলা।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের মতে, মাধবদীর ভূমিকম্পের মূল কারণ ভূগর্ভে ইন্ডিয়ান প্লেট ও বার্মিজ প্লেটের সীমানায় অবস্থান পরিবর্তন। পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠ নানা টেকটনিক প্লেটে বিভক্ত এবং এগুলো একে অপরের সাপেক্ষে সরছে। এ ধরনের সঞ্চিত শক্তি দীর্ঘদিন পর হঠাৎ বেরিয়ে এলেই সৃষ্টি হয় কম্পন।

বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সক্রিয় ফল্ট লাইন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো ডাউকি ফল্ট ও সিলেট–চট্টগ্রাম–টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত সাবডাকশন জোন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় প্লেট পূর্ব দিকে সরতে সরতে বার্মা প্লেটের নিচে ঢুকে যাচ্ছে। এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে যে শক্তি জমছে, তা ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার বড় ভূমিকম্পের মতো বিপদ ডেকে আনতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাধবদীতে যে কম্পন হয়েছে তা মূল ফল্ট লাইনের খুব ক্ষুদ্র একটি অংশ খুলে যাওয়ার ইঙ্গিত। এ পরিস্থিতি সামনে আরও বড়মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিকে সহজ করে দেয়। বিদ্যমান শক্তি দীর্ঘদিন ধরে লকড অবস্থায় ছিল। এখন তার অংশবিশেষ বেরিয়ে আসায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।

৮০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ অঞ্চলে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। এই শক্তি বের হয়ে আসলে ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে ব্যাপক বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল অবকাঠামো এবং সংকীর্ণ সড়ক ব্যবস্থার কারণে ঢাকায় বড় আকারের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে অনেক বেশি।

ইতিহাসে ভয়ংকর কম্পনের নজির
বাংলাদেশ-সংলগ্ন অঞ্চলে বড় ভূমিকম্প অতীতেও হয়েছে।
১৭৯৭ সালের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছিল।
১৮৯৭ সালে ডাউকি ফল্ট এলাকায় হয়েছিল ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প।
১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে সেন্টমার্টিন দ্বীপ তিন মিটার উঁচু হয়ে যায়।
১৯২২ ও ১৮৬৮ সালে সিলেট–মৌলভীবাজার অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার কম্পন হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ঝুঁকির অবস্থান আরও জটিল। কারণ, ফল্ট লাইনে যেখানেই বড় ভূমিকম্প হোক না কেন, তার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে ঢাকায়।

এসএইচ 

Link copied!