ফাইল ছবি
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের দিন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর এই দিনে পরাজয় স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিকামী বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনা হয়েছিল স্বাধীনতার সূর্য। ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগে রচিত হয় বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সেই পৈশাচিক হামলার পরই শুরু হয় প্রতিরোধ সংগ্রাম, যা রূপ নেয় সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ নয় মাসের অসম যুদ্ধে দেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে লড়াই করে। শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। এর মধ্য দিয়েই পৃথিবীর মানচিত্রে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক বাণীতে রাজনৈতিক সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা প্রতিষ্ঠা জরুরি। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখতে হবে। উন্নত ও সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গড়াই হোক বিজয় দিবসের প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের যে স্বপ্ন মানুষ দেখেছে, তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও সুশাসিত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করছে। দেশকে আরও শক্তিশালী করা এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বিজয় দিবস শুধু গর্বের দিন নয়, এটি শপথেরও দিন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, ঐক্য বজায় রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করাই এই দিনের অঙ্গীকার। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতি হিসেবে নিজস্ব পরিচিতি লাভ করেছে এবং লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সেই স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব আজও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
গৌরব, ত্যাগ আর শোকের মিশেলে আজকের দিনটি বাঙালি জাতির জন্য আত্মপরিচয়ের প্রতীক। মহান বিজয় দিবসে শহীদদের স্মরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ই হয়ে উঠেছে জাতির অঙ্গীকার।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :