মহাসচিব, রাজনীতিতে ফিরবেন কবে

  • আনোয়ার বারী পিন্টু | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০১:৫৬ পিএম
মহাসচিব, রাজনীতিতে ফিরবেন কবে

ঢাকা : শূন্যস্থান কখনো খালি থাকে না, প্রয়োজনেই নতুন কিছুর উদ্ভব হয়। প্রকৃতি তার নিয়মেই নিজেকে সাজিয়ে তোলে। বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্নও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সময়ের কারণেই মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা স্বপ্নে আঁকা দল বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়াও একই পথে হেঁটেছিলেন। সময় যেমন সৃষ্টিতে এগিয়ে যায়, তেমনি সময়ের অযত্নে বিশাল খরস্রোতা তিতাস নদীতে চর জেগেছিল। দলটিরও কি তাই হয়েছে! ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়’—স্লোগান উল্টে দিয়ে এখন কুটিল নেতারাই মুখ্য, সংগঠন কেবল পদ্মপাতার জল। সংকটের সূত্রপাত এখানেই।

বিএনপিতে দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়। এ কথা অমূলক নয়! পৃথিবী যেমন ব্যক্তিমালিকানায় বন্দি, তেমনি ব্যক্তির অর্থ আর অহংকারের কাছে বিএনপি দরিদ্র হয়ে গেছে। দলটির গঠনতন্ত্র দাসে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষিত ত্যাগীদের ষোলোকলার চলে দূরে ঠেলে নব্যদের পদ-পদবি তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে এখন মুক্তবুদ্ধি চর্চার মানুষেরা কেউ নেই। গণমাধ্যম এক ধরনের আড়ি হয়ে আছে। শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের মূল্যায়ন হয়নি। ফলে যে চিত্র দেশেই হবার কথা, তা চীনের কার্টুনিস্টকে করতে হয়েছে। সুসময় আপন কাজে ব্যবহূত না হওয়ায় গত ১০ বছরে ক্রমাগত বিএনপিকে এর মূল্য দিতে হচ্ছে। তবু বোধোদয় হয়নি।

দলের মনোনয়ন নিতে লম্বা লম্বা মিছিলের জোয়ার উঠেছিল নয়াপল্টনে। তা দেখে অনেকেই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললেও অনেকেরই সংশয় জেগেছিল। এসব মানুষের মনোনয়ন ভাগানোর তালিকাও বেশ লম্বা। মনোনয়ন এতই সহজ যে, জাহিদুলও বিজয়ী হয়ে শপথ নিয়েছে, বাকি জাহিদুলরাও যদি বিজয়ী হতো, তবে বিএনপির ইজ্জত-আব্রু আরো বেশি ধূলিসাৎ হতো।

তাছাড়া ঐক্যফ্রন্টের ঘটনাক্রম বিশেষ চিন্তার উদ্রেক ঘটায়। আশার প্রদীপ জ্বেলে ঐক্যফ্রন্টের সাথে গণভবনে ভ্রমণ করা। পরিস্থিতি উন্নয়নের ফাঁদে ফেলে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া। নির্বাচনের পর প্রার্থীদের একত্রিত করে প্রতিবাদ করতে না পারা। সুলতান মনসুর ও মোকাব্বিরের প্রতারণা। দল এবং জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করার পরও মোকাব্বির এবং সুলতান মনসুরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না নেওয়া। বেগম জিয়ার মুক্তি নিয়ে ড. কামালের বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান। এত কিছুর পরও এখনো বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে স্বপ্ন দেখে!

মহাসচিবের জন্য করুণা হয়েছিল বেশ আগেই। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপ ব্যর্থ হয়ে আসার পর বেইলি রোডে ড. কামালের বাড়িতে তার বিমূঢ় চেহারা এখনো ভোলার নয়। সেদিন বুঝেছিলাম, মহাসচিব গন্তব্যহীন যাত্রা শুরু করেছেন। একজন আত্মমর্যাদা-সম্পন্ন ব্যক্তি বটবৃক্ষের ন্যায় দলের মহাসচিব হয়ে তিনি টবের গাছের (ঐক্যফ্রন্ট) সাথে ঐক্য করেছেন। লক্ষ লক্ষ সমর্থক থাকার পরও বিএনপিকে ভর করতে হয়!

কমিটি না করে কর্মীদের বয়স শেষ করে আচমকা বিজ্ঞপ্তি আকারে কমিটি দলটির মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে। পল্টনে রিজভীর বিজলী মিছিল আর গুলশানে স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক বসালেই তাকে রাজনীতি বলে না। আওয়ামী লীগ অফিসেও একসময় বাতি জ্বালানোর লোক ছিল না। ২৪ বছর ক্ষমতায় আসেনি, তাই বলে তারা রাজনীতি ছেড়ে দেয়নি। কাউন্সিল করে তাদের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করতেও তিন দিন লাগে না। গান, কবিতা, গল্প, নাটক, অভিনয়ে তাদের লোকের অভাব হয় না। অভাব কেবল বিএনপিতে!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিএনপির রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়েও সরকারের কোনো চাপ বা চেষ্টা নেই। বিএনপি স্বর্ণলতার মতো। দেখতে সুন্দর কিন্তু  শেকড় নেই। (প্রথম আলো, ২৬ এপ্রিল) মাননীয় মহাসচিব, বিএনপির বর্তমান রুগ্ণতা সেই শেকড়হীনতার প্রমাণ কি না জানি না। বিএনপিকে নিয়ে তাচ্ছিল্যভরা কথায় নিঃসন্দেহে আপনার মনে রক্তক্ষরণ হয়, তৃণমূল কর্মীরা উদাসগ্রস্ত হয়। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে ভুল প্রমাণ করুন। ব্রিফিং পিরিয়ড, জরুরি বৈঠক ছেড়ে এবার অন্তত রাজনীতিতে আসুন।

লেখক : সংবাদকর্মী

Link copied!