ছবি: সোনালীনিউজ
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও তাদের এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সম্পর্ক প্রায় ভাঙনের মুখে। দুই পক্ষই প্রকাশ্যে একে অন্যকে ‘আওয়ামী লীগের ভাষায়’ কথা বলার অভিযোগ তুলছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তিক্ততা এখন শুধু মঞ্চে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের কর্মীদের মাঝেও।
সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন সভা–সমাবেশে দুই দলের নেতারা পরস্পরকে ইঙ্গিত করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন। তবে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে সিলেটে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের বক্তব্য ও তার পরদিন লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল জবাবের পর।
তারেক রহমানের বক্তব্যে স্পষ্টই উঠে আসে ক্ষোভের সুর। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতের অবস্থান জনগণ দেখেছে; আর এখন তারা বিএনপির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে তা পুরোনো স্বৈরাচার শাসকের ভাষার সঙ্গে মিলে যায়। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, আক্রমণাত্মক ভাষা বিএনপির দিক থেকেই শুরু হয়েছে, যা তারা মোটেও প্রত্যাশা করেনি।
দুই দলের নেতার বক্তব্যে যেমন উত্তাপ বাড়ছে, তেমনি এর ঢেউ নেমেছে স্থানীয় পর্যায়েও। পাবনা, চট্টগ্রাম, নরসিংদীসহ কয়েকটি জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, তিক্ততার এই প্রসার নির্বাচনি পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। নয়া দিগন্তের সম্পাদক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের ভাষায়, দুই দল এখন ‘এক-অপরকে ঘায়েল করার’ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এতে ভোটারদের মধ্যে বিরক্তি তৈরি হতে পারে এবং নির্বাচনি মাঠে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে একসঙ্গে সরকারে থাকা দুই দল এখন ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা তুলে ধরায় ব্যস্ত। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধ ইস্যু সামনে আনছে, যেখানে জামায়াত তুলে ধরছে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, রাজনৈতিক কৌশলেই দুই দল একে অন্যের ‘সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায়’ আঘাত করছে। তার ভাষায়, মূল লক্ষ্য হলো ভোটে লাভবান হওয়া। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ থাকা ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে চাইছে বিএনপি, আর দুর্নীতির ইস্যু সামনে এনে জামায়াত দেখাতে চাইছে যে রাজনৈতিক আচরণে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তফাত বেশি নেই।
দুই দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা যদিও প্রকাশ্যে সৌজন্যপূর্ণ থাকার চেষ্টা করছেন, কিন্তু বক্তব্যে যে উত্তাপ জমেছে তা শিগগিরই কমবে-তার কোনো লক্ষণ নেই। নির্বাচনের আগে এই তিক্ততা বাড়বে নাকি কোনো সমন্বয়ের পথে হাঁটবে দুই দল-এখন রাজনৈতিক মহলের নজর সেদিকেই।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :