ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর থেকে সাভারের কাউন্দিয়া পর্যন্ত এখন এক অদ্ভুত আবেগের হাওয়া বইছে। ঢাকা-১৪ আসনের নির্বাচনি মাঠে মুখোমুখি হয়েছেন দুই মানুষ, যাদের দুজনেরই জীবনে আছে গুমের কালো ইতিহাস। একজন নিজে গুমের শিকার হয়েছিলেন, অন্যজন গুমের শিকার এক ভাইয়ের বোন। একজন জামায়াতের প্রার্থী ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাসেম (আরমান), অন্যজন বিএনপির সানজিদা ইসলাম তুলি। অথচ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, তাদের প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে একে অন্যের প্রতি সম্মান আর মানবিকতার সেতুবন্ধন।
ঢাকা-১৪ আসন-দারুস সালাম, শাহ আলী, মিরপুর থানার আংশিক এলাকা ও সাভারের কাউন্দিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার প্রায় সাড়ে চার লাখ।
আরমান জামায়াতের মনোনয়ন পেয়ে অনেক আগে থেকেই মাঠে। আট বছর নিখোঁজ থাকার পর তিনি গত ৫ আগস্ট ফিরে আসেন। ‘আয়নাঘর’-এর অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে ফিরে এসে এখন মসজিদ-মাদ্রাসা, পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। তার ব্যানারে লেখা—‘ভয় নয়, সত্যের পথে’। হুড খোলা গাড়িতে দাঁড়িয়ে তিনি জনতার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন, শিশুদের কোলে নিচ্ছেন, মাদকমুক্ত সমাজ আর সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলি গুম হওয়া নেতা সুমনের বোন। ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তিনি “মায়ের ডাক” সংগঠনের মাধ্যমে গুম হওয়া পরিবারগুলোর পাশে ছিলেন। এবার দলের মনোনয়ন পেয়ে তিনি মাঠে নেমেছেন ‘ভাইদের ফেরানোর’ আশায়। তার প্রচারণায় বারবার উচ্চারিত হচ্ছে একটাই কথা-“যারা ফিরে আসেনি, তাদের পক্ষেই আমি মাঠে।”
তুলি বললেন, ‘১২ বছর ধরে আন্দোলন করেছি। আরমান ভাই ফিরে এসেছেন, এটা আমাদের আশা জাগায়। আমার ভাই সুমন এখনো ফেরেনি। তাই প্রতিটি গুম পরিবারের অধিকার আদায়ে আমাকে লড়তে হচ্ছে। আমি চাই, এই দেশটা যেন মানবিক হয়ে উঠুক।’
তার এই বক্তব্যের জবাবে আরমানও বলেন, ‘তুলি আমার বোনের মতো। গুমের অন্ধকার থেকে আমি ফিরেছি, কিন্তু অনেকেই পারেননি। আমাদের লড়াই যেন একে অপরের বিরুদ্ধে নয়-অন্যায়ের বিরুদ্ধে হয়।’
এই ব্যতিক্রমী সম্পর্ক এখন নির্বাচনের মাঠে আলোচনার কেন্দ্র। স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ হাসান বলেন, ‘রাজনীতিতে এমন মানবিক দৃষ্টান্ত এখন বিরল। দুই দলের প্রার্থী হলেও দুজনেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল-এটাই বড় পাওয়া।’
ঢাকা-১৪ আসনের ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজারের বেশি। অতীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পালাক্রমে জয়ী হয়েছে। এবার সেই আসনে দেখা যাচ্ছে অন্য এক রকম লড়াই-ক্ষমতার নয়, সহমর্মিতার।
স্থানীয় তরুণ আকরাম মির্জা বলেন, ‘এ আসনের রাজনীতিতে প্রথমবার আমরা দেখছি বিবেকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বা গালাগাল নয়-মানবিকতার গল্প লিখছে এই নির্বাচন।’
কল্যাণপুরের বাসিন্দা মাইনুল হোসেনের ভাষায়, ‘কে জিতবে জানি না। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ঢাকা-১৪ আসন দেশের রাজনীতিতে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।’
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :