ফাইল ছবি
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মঞ্চেও নজর কাড়ছে। বসুন্ধরার জামায়াত আমিরের কার্যালয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান মিস হুমা খানের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক্যান ইন্সটিটিউটের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপ হয়। এর আগে বৃটিশ হাইকমিশনার, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল এবং নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দেশের জাতীয় দিবস ও বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণও করে। যেমন তুরস্ক ও আলজেরিয়ার জাতীয় দিবস, ভুটানের রাজা জিগমে সিংয়ে ওয়াংচুকের জন্মদিন এবং জার্মানির ‘দি ডে অব জার্মান ইউনিটি’ উদযাপন। এসব কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে জামায়াতের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি কৌশল, যা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি বিদেশি সহযোগিতা এবং নজর কাড়ার একটি সুযোগ তৈরি করছে।
দলের অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থী এবং সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমানকে মনোনয়ন দেওয়ার মাধ্যমে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে তুলনামূলক জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছে। বিএনপির ভেতরের জটিলতা, নেতৃত্বের ঘাটতি এবং দলীয় ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে জামায়াত এই কৌশলকে নির্বাচনী সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলটি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সমর্থন আকর্ষণ, মিডিয়া প্রভাব বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে সচেষ্ট।
বর্তমান নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে, বিএনপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ সমন্বয় ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় জামায়াত তার সমীকরণকে সঠিকভাবে সাজিয়ে দিচ্ছে। নতুন প্রার্থী তালিকায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে আনার মাধ্যমে দল নিজেকে বহুমুখী এবং গণমুখী হিসাবে উপস্থাপন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াত কেবল নিজের শক্তি বৃদ্ধি করাই লক্ষ্য রাখছে না, বরং অন্যান্য ইসলামীক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য ও সমন্বয় তৈরিতেও সক্রিয় হচ্ছে। তারা মনে করছেন, ধর্মনির্ভর রাজনৈতিক দলের সমন্বয় সরকারের সম্ভাব্য সমীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচনী প্রেক্ষাপটে ইসলামীক দলগুলোর যৌথ প্রার্থী বা সমন্বিত ভোটে জামায়াত অতিরিক্ত প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে, যা ক্ষমতা কেন্দ্রের জন্য সুবিধাজনক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতের এই পদক্ষেপগুলো মূলত তিনটি স্তরে সমীকরণ তৈরি করছে-দেশীয় রাজনৈতিক সমীকরণ, সম্প্রদায়িক সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক। দলের লক্ষ্য হচ্ছে শুধু নির্বাচন জেতা নয়, বরং ভবিষ্যতের সরকার গঠন এবং জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের পথ তৈরি করা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াত কৌশলগতভাবে নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে। বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধি এবং সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা, সম্প্রদায়ভিত্তিক সমর্থন তৈরি এবং মিডিয়ার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো-সবই তাদের সরকারের সম্ভাব্য সমীকরণকে প্রভাবিত করবে। নির্বাচনী ফলাফল, দলীয় নেতৃত্বের কার্যকারিতা এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই সমীকরণের কার্যকারিতা নির্ধারণ করবে।
জামায়াতের এই নতুন কৌশল এবং বহুমুখী সমীকরণ এখন দেখার বিষয়, আগামী নির্বাচনের পর এটি কতটা কার্যকর হবে এবং জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ক্ষমতা ও প্রভাব কতটা বিস্তৃত হবে।
এসএইচ
আপনার মতামত লিখুন :